প্রাণ-আরএফএল এর অন্যতম রপ্তানি পণ্য হয়ে উঠছে নন-লেদার জুতা। ২০৩০ সালের মধ্যে এই পণ্য রপ্তানি করে ৫ কোটি ডলার আয়ের লক্ষ্য ঠিক করেছে শিল্প গ্রুপটি। গ্রুপের চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী আহসান খান চৌধুরী বলছেন, পোশাক খাতের মতই আরেকটি শ্রমঘন শিল্প ও রপ্তানি বাণিজ্যের সম্ভাবনা হাতছানি দিচ্ছে বাংলাদেশকে।
ক্রেতা অন্বেষণ এবং দক্ষতা বাড়িয়ে মানসম্পন্ন জুতা তৈরির মাধ্যমে এই শিল্প থেকেই বছরে ৬০ বিলিয়ন ডলার আয় করা সম্ভব বলে মনে করছেন তিনি।
শনিবার দুপুরে নরসিংদীর ডাঙ্গা ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের প্রাণ-আরএফএল এর পাদুকা কারখানা পরিদর্শন শেষে মতবিনিময়ে এ কথা বলেন প্রাণের প্রধান নির্বাহী।
জার্মানি, ফ্রান্স, স্পেন, নেদারল্যান্ডস এবং ইতালি বাংলাদেশের প্রধান ক্রেতা হয়ে উঠেছে জানিয়ে আহসান খান চৌধুরী জানান, ইউরোপে সুইস ব্র্যান্ড ‘এইচ অ্যান্ড এম’ ছাড়াও কাপ্পা, আমব্রো, এয়ারনেস ও রেড টেপ বাংলাদেশ থেকে পণ্য কিনে নিচ্ছে। সব মিলিয়ে ৩৭টি দেশে পণ্য রপ্তানি হচ্ছে এসব জুতা।
প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ ২০১৭ সালে জুতার কারখানা শুরু করে। তবে রপ্তানির অর্ডার পাওয়া শুরু করে ২০২১-২২ অর্থবছরে।
ওই অর্থবছরে ৪৭ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানি করে গ্রুপটি। পরের অর্থবছর তা বেড়ে হয় ৭২ লাখ। চলতি অর্থবছরে এটা দেড় কোটি ডলারে দাঁড়াবে বলে আশা করছে প্রাণ।
আহসান খান বলেন, “বাংলাদেশ লেদার এবং নন-লেদার জুতা তৈরি ও রপ্তানি করলেও নন-লেদারের সম্ভাবনা বেশি। কারণ, এখন বিশ্বজুড়েই নন-লেদার ফুটওয়্যারের চাহিদা বাড়ছে।”
এই পণ্য রপ্তানিতে চীন এখনও সবাইকে ছাড়িয়ে। তবে সারা বিশ্ব এখন চীনের বিকল্প উৎস খুঁজছে জানিয়ে তিনি বলেন, “চীন থেকে ব্যবসা কমিয়ে বাংলাদেশসহ বিশ্বের বেশকিছু দেশে ব্যবসা বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে বৈশ্বিক জুতার ব্র্যান্ডগুলোর।”
আগামী এক বছরের মধ্যে দেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলে ১০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করে আরেকটি রপ্তানিমুখী কারখানা করার পরিকল্পনার কথাও জানানো হয় মত বিনিময়ে। এখন কমমূল্যের জুতা তৈরি করা হলেও শিগগির বেশি দামের জুতা উৎপাদনের কথাও বলেন তিনি।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাংলাদেশ ৪৭ কোটি ৮০ লাখ ডলার সমমূল্যের নন-লেদার ফুটওয়্যার রপ্তানি করেছে। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে এই খাতে আয় ছিল ২৪ কোটি ৪০ লাখ ডলার। অর্থাৎ মাত্র পাঁচ বছরে দ্বিগুণ আয় করেছে দেশ।
প্রাণের প্রধান নির্বাহী মনে করেন দক্ষ কর্মীর অভাব ও পশ্চাৎ শিল্পের দুর্বলতা বাংলাদেশের সম্ভাবনার পথে বড় বাধা। তিনি উৎপাদন ব্যয় কমিয়ে প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বাড়ানোর তাগিদও দিয়েছেন।
বিশেষ করে সোল তৈরিতে বিনিয়োগের ওপর জোর দেন আহসান খান। জানান সোল ছাড়াও মোল্ড এবং সিনথেটিক নিজেরাই যাতে উৎপাদন করার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।
দক্ষ কর্মী গড়ে তুলতে সরকার ভোকেশনাল ট্রেইনিং সেন্টারের মাধ্যমে বিভিন্ন কোর্স চালু করতে পারে বলে মত দেন তিনি। বলেন, “দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি হলে এ খাত আরো অনেক দূর এগিয়ে যাবে। পর্যাপ্ত ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ শিল্প গড়ে তুলতেও সরকারকে সহায়তা দিতে হবে।”
আহসান খান বলেন, “আমরা এই কারখানা শুরু করার প্রথম বছর তেমন একটা দক্ষ কর্মী পাইনি। তবে আমাদের নিজেদের উদ্যোগে প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ কর্মী তৈরি করেছি।”
আমদানি রপ্তানির ক্ষেত্রে দ্রুত পণ্য খালাস এবং পরিবহনের সময় কমিয়ে আনার ওপরও জোর দেন তিনি। বলেন, “বন্দর থেকে দ্রুত খালাস ও উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার মাধ্যমে দ্রুত রপ্তানির ব্যবস্থা করতে হবে।”
নরসিংদীতে প্রাণের কারখানায় গিয়ে দেখা যায়, শত শত কর্মী জুতা তৈরি করছেন। বিশ্বখ্যাত এইচ অ্যান্ড এম, কাপ্পা ও আমব্রোসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের অর্ডারের কাজ চলছে বলে জানান প্রাণ আরএফএল এর প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা রাহাত হোসেন রনি।
তিনি বলেন, “এই কারখানায় তৈরি হচ্ছে, স্নিকার, লেডিস সুজ ও স্যান্ডাল ও কিডস আইটেম।”
দুইটি ইউনিটে চারটি ভিন্ন ভিন্ন প্রক্রিয়ায় মোট ১০টি উৎপাদন লাইনে বিভিন্ন ধরনের জুতা উৎপাদন করছেন কর্মীরা।
Leave a Reply