সত্যখবর ডেস্ক: কুষ্টিয়ায় ফসলি জমির উর্বর মাটি দিন-রাত প্রকাশ্যে কেটে নেওয়া হচ্ছে। গেল দুই-তিন মাস ধরে জেলার বিভিন্ন এলাকায় ভেকু মেশিন দিয়ে এসব ফসলি জমির মাটি কেটে বিক্রি করছেন কিছু অসাধু ব্যবসায়ী। এতে প্রশাসন মাঝেমধ্যে ব্যবস্থা নিলেও কোনভাবেই বন্ধ হচ্ছে না মাটিকাটা ও মাটি বিক্রি।
মাটি ব্যবসায়ীরা বলছে, স্থানীয় প্রশাসন এবং প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তিদের টাকা-পয়সা দিয়ে ম্যানেজ করেই মাটির ব্যবসা করছেন তারা। এ চিত্র জেলার দৌলতপুর, মিরপুর, ভেড়ামারা, কুমারখালী, খোকসা উপজেলাসহ জেলার বিভিন্ন এলাকায় ভেকু মেশিন দিয়ে ফসলি জমির মাটি কেটে বিক্রি করা হচ্ছে। এর মধ্যে জেলার দৌলতপুর উপজেলার রিফাইতপুর, হরিণগাছি, দিঘলকান্দি, শেরপুর, আড়িয়া ইউনিয়নের আড়িয়া বাজারের পাশে, দৌলতপুর সদর ইউনিয়নে, লাউবাড়ী, কিশোরী নগর।
অপরদিকে জেলার ভেড়ামারা উপজেলার জুনিয়াদহ ইউনিয়নের নলুয়াতে রাত হলেই চলে মাটিকাটার মহোৎসব। শুধু তাই নয়, প্রতিবছর এ জেলায় শত শত একর ফসলি জমির মাটিকাটা হচ্ছে। এ কারণে আবাদি জমি কমে যাচ্ছে। প্রশাসনকে টাকার বিনিময়ে ম্যানেজ করে অবৈধভাবে মাটি বিক্রি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে স্থানীয়দের। মাটি কেটে অবৈধ ট্রলিতে করে নেওয়া হয়। প্রতিনিয়ত এই ট্রলি চলাচল করায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে স্থানীয় কাঁচা-পাকা রাস্তা। অতিরিক্ত ট্রলি চলায় সামান্য বৃষ্টি হলেই কাঁচা রাস্তাগুলোতে কাঁদা হয়। এতে দুর্ঘটনাও ঘটছে প্রায়।
নামপ্রকাশ না করার শর্তে জেলার বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দারা বলছে, মাটি ব্যবসায়ীরা স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী হওয়ায় তাদের ভয়ে কেউ মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছে না। মুখ খুললে তাদের ওপর নেমে আসে নির্যাতন। হতে হয় হয়রানির শিকারও। তাই চুপ করে থাকা। তবে চুপ করে থেকে সব থেকে বেশি ক্ষতি হচ্ছে আমাদের। মাটিখেকোরা প্রশাসনকে মোটা অংকের টাকা দিয়েই নির্বিচারে আইন না মেনেই দিনরাত কাটা হচ্ছে ফসলি জমির উর্বর মাটি। আর সেই মাটি ব্যবসায়ী চক্র বিভিন্ন ইটভাটায় বিক্রি করছেন। কেউ কেউ দালালের মাধ্যমে কৃষকদের লোভে ফেলে ফসলি জমির মাটি কিনছেন। ৭-৮ ফুট গভীর করে মাটিকাটার ফলে অনেক জমি ডোবায় পরিণত হয়েছে। এখানে না হচ্ছে ফসল, না করা যাচ্ছে মাছ চাষ।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, দিনেরাতে প্রশাসনের চোখের সামনে ফসলি জমির মাটি ভেকু দিয়ে কেটে ট্রলিতে করে ইটভাটায় পাঠাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। এছাড়া ট্রাক করেও প্রতিটি জায়গা থেকে মাটি পরিবহনের কাজে ব্যবহার করছেন ট্রলি। আর সেই মাটি চলে যাচ্ছে ইটভাটায়। অনেক ব্যবসায়ী নির্বিঘ্নে চালিয়ে যাচ্ছেন মাটির ব্যবসা।
এ বিষয়ে কুষ্টিয়ার পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক হাবিবুল বাসারের সাথে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলে তিনি কলটি রিসিভ করেননি।
পরিবেশবিজ্ঞানী গৌতম কুমার রায় বলেন, কৃষি জমির মাটি অর্থাৎ টপ সয়েল চলে যাচ্ছে ইটভাটায়। এতে প্রভাব পড়ছে এ জেলার মানুষের খাদ্য নিরাপত্তায়। মাটিকাটা বন্ধে আইন আছে, তবে প্রয়োগ নেই। যারা আইন বাস্তবায়ন করবেন তারা হয় অন্ধ কিংবা টাকার বিনিময়ে ম্যানেজ হয়ে চুপচাপ থাকেন। কৃষি জমির উর্বর মাটি রক্ষায় প্রশাসনকে এগিয়ে আসতে হবে।
এ বিষয়ে কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক মো, এহেতেশাম রেজা বলেন, বিচ্ছিন্ন কিছু অভিযোগ থাকে।আমরাও খবর পেলেই সেখানে ছুটে গিয়ে আইনগত ব্যবস্থা নিই। লিখিত অভিযোগ পেলেই তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
Leave a Reply