1. mmisuk010@gmail.com : Misuk joy : Misuk joy
  2. admin@wordpress.com : root :
  3. rijukushtia@gmail.com : riju :

কুষ্টিয়ায় ব্যবসায়ীকে কুপিয়ে হত্যা: ইউপি চেয়ারম্যানসহ গ্রেপ্তার-২

  • আপডেট টাইমঃ বৃহস্পতিবার, ১৪ মার্চ, ২০২৪
  • ৪৯ মোট ভিউ
কুষ্টিয়ায় ব্যবসায়ীকে কুপিয়ে হত্যা: ইউপি চেয়ারম্যানসহ গ্রেপ্তার-২

সত্যখবর ডেস্ক: কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে আমিরুল হোসেন নান্নু (৪৫) নামে এক ব্যবসায়ীকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় যদুবয়রা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মিজানুর রহমানসহ দুইজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ হত্যাকাণ্ডের পর থেকে ওই এলাকায় থমথমে পরিবেশ বিরাজ করছে। আসামিপক্ষের বেশ কয়েকজনের বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুর, লুটপাট ও হামলার ঘটনা ঘটেছে।

হত্যার ঘটনায় বৃহস্পতিবার (১৪ মার্চ) দুপুরে নিহতের বড় ভাই জহিরুল ইসলাম লালু বাদী হয়ে কুমারখালী থানায় ১৬ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাত চার-পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন।

কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) পলাশ কান্তি নাথ বলেন, নান্নু হত্যার ঘটনায় কুমারখালী থানায় ১৬ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাত চার-পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। ইউপি চেয়ারম্যানসহ দুই আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

এদিকে গ্রেপ্তার, হামলা ও মামলার ভয়ে এলাকা ছেড়েছেন আসামিপক্ষের অনেকেই। প্রায় শতাধিক পরিবার পুরুষশূন্য হয়ে পড়েছে। যে কোনো সময় আবারও হামলা করতে পারে এমন আশঙ্কায় বাড়িতে অবস্থানকারী নারী ও শিশুরা আতঙ্কের মধ্যে রয়েছে। হত্যাকাণ্ডের পরপরই বুধবার (১৩ মার্চ) রাতে কুমারখালী উপজেলার যদুবয়রা ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের উত্তর চাঁদপুর গ্রামের ঘরবাড়ি ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে। হত্যা ও ঘরবাড়িতে হামলার ঘটনায় উভয়পক্ষই জড়িত অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।

বৃহস্পতিবার চাঁদপুর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, হত্যা পরবর্তী সহিংসতায় বাড়িঘর ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ এবং লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে। হামলার ভয়ে অনেকেই বাড়ি ছেড়ে আত্মীয়-স্বজনদের বাড়িতে চলে যাচ্ছেন।

নিহতের পরিবার, পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে আধিপত্য বিস্তার ও পূর্ব শত্রুতাকে কেন্দ্র করে প্রতিপক্ষের লোকজন নান্নুকে কুপিয়ে হত্যা করে। বুধবার রাত ৮টার দিকে একটি ভুট্টা খেতের তার রক্তাক্ত মরদেহ পাওয়া যায়। খবর পেয়ে মরদেহ উদ্ধার করে মর্গে পাঠানো হয়। ময়নাতদন্ত শেষে বৃহস্পতিবার দুপুরে পরিবারের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করে পুলিশ। বিকেল ৩টায় নিহতের দাফন সম্পন্ন হয়েছে।

স্থানীয়রা বলেন, নান্নু হত্যাকাণ্ডের পর থেকে ওই এলাকায় থমথমে পরিবেশ বিরাজ করছে। হামলা-মামলার ভয়ে আসামিপক্ষের লোকজন এলাকা ছেড়েছেন। প্রায় শতাধিক পরিবার পুরুষশূন্য। তারা গ্রাম ছাড়ার ফলে অনেকের বাড়িঘর ভাঙচুর করা হয়েছে, কয়েকটি ঘরবাড়ি আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। গরু, ধানসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে।

হাসিনা নামের এক নারী বলেন, আমার স্বামী মান্নান হামলা মামলার ভয়ে বাড়ি থেকে পালিয়েছেন। আমি গর্ভবতী মেয়েকে নিয়ে বাড়িতে আছি। আমাদের প্রতিপক্ষের একজনকে হত্যা করা হয়েছে। হত্যার ঘটনার পর থেকে এলাকার অবস্থা খুবই খারাপ। রাতে আমার বাড়ি থেকে নিহতের পক্ষের লোকজন দুটি গরু লুট করে নিয়ে গেছে। হামলা করে আমাদের ঘরবাড়ি ভাঙচুর করেছে। আমার মতো প্রায় ১০ জনের বাড়ি ভাঙচুর করেছে। তিন-চারটি বাড়ি আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে। প্রায় ১০টি গরু লুট করে নিয়ে গেছে নিহতের পক্ষের লোকজন। তারা বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি দেখাচ্ছে। আমাদের পক্ষের অনেকেই বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে গেছে। এখনো অনেকেই বাড়ি ছেড়ে আত্মীয় স্বজনদের বাড়িতে চলে যাচ্ছে। আমি গরু ফেরত চাই, জীবনের নিরাপত্তা চাই। তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, আসামি পক্ষের ৮ থেকে ১০টি ঘরবাড়িতে ভাঙচুর করা হয়েছে। চারটি পরিবারের ঘরবাড়ি আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। আসামিপক্ষের পরিবারগুলো পুরুষ শূন্য। নিহতের পক্ষের লোকজন যেকোনো সময় আবারও হামলা করতে পারে এমন আশঙ্কায় বাড়িতে অবস্থানকারী নারী ও শিশুরা আতঙ্কের মধ্যে রয়েছে। ওই এলাকায় বিভিন্ন জায়গায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

ময়নাতদন্তের শেষে বৃহস্পতিবার দুপুরে নিহতের বাড়িতে মরদেহ পৌঁছালে কান্নায় ভেঙে পড়েন পরিবারের লোকজন ও স্বজনরা। শেষবারের মতো মরদেহ দেখতে ভিড় করেন স্থানীয়রা ও স্বজনরা। তারা হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান। এছাড়া হত্যাকাণ্ডের ঘটনার পর হামলা, ঘরবাড়ি ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় জড়িতদের শাস্তির দাবি জানিয়েছেন আসামিপক্ষের লোকজন।

মানিক নামে একজন বলেন, আমাদের পক্ষের পুরুষ মানুষ সবাই পলাতক। হত্যাকাণ্ডের পর বুধবার রাতে ১০টি বাড়িতে হামলা করে ভাঙচুর ও লুটপাট করেছে নিহত পক্ষের লোকজন। ১০ থেকে ১২টি গরু, ধানসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র লুট করে নিয়ে গেছে। এছাড়াও আকাল, মশান, আশান ও সোহানের বাড়ি আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে। গরু ছাগল ও জিনিসপত্র নিয়ে গেছে। রাজ্জাক শেখ, হেলাল, মান্নানসহ অনেকের বাড়িতে হামলা করে ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়েছে। আজ রাতে কী হবে তা নিয়ে আমরা ভয়ে আছি। অনেকে গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে যাচ্ছে। আমরা আমাদের নিরাপত্তা চাই। হত্যা ও লুটপাটের ঘটনায় জড়িত দুই পক্ষের দোষীদের শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।

তবে নিহতের পক্ষের আলিমুন হোসেন বলেন, আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে নান্নুকে নির্মমভাবে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। হত্যার ঘটনা ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার জন্য আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ দিচ্ছে। ঘরবাড়ি ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট কারা করছে তা আমরা জানি না। এলাকায় বিভিন্ন স্থানে পুলিশ প্রশাসন দায়িত্ব পালন করছে। হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় জড়িত সবার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।

নিহতের স্বজনরা বলেন, নান্নু বুধবার ইফতার শেষ করে বাড়ি থেকে কেশবপুরে তার ইজারা নেওয়া দিঘিতে যাচ্ছিলেন। পূর্ব শত্রুতার জেরে প্রতিপক্ষের লোকজন পথিমধ্যে তার গতিরোধ করে জোরপূর্বক পাশের একটি ভুট্টা খেতে নিয়ে পিটিয়ে ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে। আমরা হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।

কুমারখালী থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আকিবুল ইসলাম বলেন, আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখছি। আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে এই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। নতুন করে সংঘর্ষ এড়াতে ওই এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। অপরাধীদের কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে। বিষয়টি তদন্ত করে অপরাধীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। অপ্রীতিকর যে কোনো ঘটনা প্রতিরোধে পুলিশ কাজ করছে।

উল্লেখ্য, কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে আমিরুল হোসেন নান্নু (৪৫) নামে এক ব্যবসায়ীকে পায়ের বিভিন্ন জায়গায় এলোপাথাড়ি কুপিয়ে ও মারপিট করে খুন করেছে প্রতিপক্ষের লোকজন। বুধবার (১৩ মার্চ) রাত ৮টার দিকে উপজেলার যদুবয়রা ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের উত্তর চাঁদপুর গ্রামের ডাকুয়া নদীর পাড়ে এ ঘটনা ঘটে।

নিহত আমিরুল কুমারখালী উপজেলার যদুবয়রা ইউনিয়নের উত্তর চাঁদপুর গ্রামের মৃত আবদুল জলিলের ছেলে। তিনি গ্রামের বাজারে মাছের আড়তদারি করতেন। মাছের ঘেরও আছে তার। এছাড়া তিনি স্থানীয় আওয়ামী লীগের একাংশের কর্মী ছিলেন। তিনি ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি তহিদ মাস্টারের পক্ষের কর্মী বলে জানা গেছে।

সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরোও পড়ুনঃ
© All rights reserved © 2021 | Powered By Sattokhobor Media Ltd
Site Customized By NewsTech.Com