সত্যখবর ডেস্ক: গত বুধবার (১৫ মে ২০২৪) অনুমোদিত হয়েছে কুষ্টিয়া পৌর যুবলীগের আহ্বায়ক কমিটি। নব্য এ কমিটির অনুমোদন দেন কুষ্টিয়া জেলা যুবলীগের সভাপতি রবিউল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক জিয়াউল ইসলাম স্বপন। যা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম (ফেইসবুক) এর বরাত দিয়ে জানতে পারে কুষ্টিয়া পৌরবাসী। কমিটিতে আহ্বায়ক করা হয়েছে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা সজীবুল ইসলাম সজীবকে। ৩১ সদস্য বিশিষ্ঠ এই কমিটি নিয়ে কুষ্টিয়া শহর জুড়ে নানান সমালোচনা দেখা দিয়েছে। কমিটিতে যাদের নাম রয়েছে তাদের মধ্যে হাতে গোনা কয়েকজন বাদে সবাই কম-বেশি বিতর্কিত। চিহ্নিত মাদক সেবনকারী, মাদকসহ আটককৃত ব্যক্তি, যৌন হয়রানি, ছিনতাই, চাঁদাবাজি ও প্রতারণা মামলার আসামিরা এই কমিটিতে জায়গা পেয়েছেন। যা নিয়ে ত্যাগী, পরিশ্রমী, ক্লিন ইমেজের সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
কমিটি ঘোষনার পর অনুসন্ধানে জানা যায়, কমিটির ১৩নং তালিকায় রয়েছে মেহেদী হাসান মানিক। যার ফেনসিডিল হাতের ছবি ইতিমধ্যে এ প্রতিবেদকের কাছে পৌঁছেছে। মানিকের সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সে একজন চিহ্নিত ফেনসিডিল সেবনকারী। প্রতিদিন ভাত না খেলেও ফেনসিডিল না খেয়ে সে থাকতে পারে না। আর এই ফেনসিডিলের টাকা যোগাড় করতে পরোক্ষভাবে মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত রয়েছে। এছাড়া তার নিয়ন্ত্রণে রয়েছে একটি বিশাল কিশোর গ্যাং বাহিনী। মানিকের ভয়ে ওই এলাকার সাধারণ মানুষ তাদের অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে পারে না। এ নিয়ে রীতিমতো প্রশ্ন উঠেছে, যাকে সাধারণ মানুষ ভয় পায় তার কাছে কতটুকু সুস্থ ধারার রাজনীতি প্রত্যাশা করা যায়।
এদিকে কমিটির তালিকা অনুসন্ধান করে আরেকজন বিতর্কিত মানুষের নাম পাওয়া যায়। মোঃ আসিফ ইকবাল। তিনি রয়েছেন কমিটির ২৩ নম্বর তালিকায়। তার সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চলতি বছরের ১৩ জানুয়ারি কুষ্টিয়া রেনউইক বাঁধ সংলগ্ন গড়াই নদীর চরে এক কলেজপড়–য়া ছাত্রী তার বন্ধুর সাথে ঘুরতে গেলে নজরে পড়ে আসিফ ও তার সহযোগীদের। পরে ওই ছাত্রী ও তার বন্ধুকে আটকে রেখে ছাত্রীকে শ্লীলতাহানি, ভিডিও ধারণ, অতঃপর চাঁদা আদায়ের মতো ঘটনা ঘটান আসিফ ও তার সহযোগীরা। এ ঘটনায় তার বিরুদ্ধে যৌন হয়রানি, চাঁদা আদায় ও ছিনতাই এর অভিযোগে মামলা দায়ের করা হয়। মামলায় আসিফ দীর্ঘদিন জেল খেটে বের হয়েই যুবলীগের সদস্য পদ বাগিয়ে নিয়েছেন।
এছাড়াও কমিটির ২৬ নম্বরে নাম দেখা যায়, সুরাইয়া সুম্মা ডোনার। তিনি নব্য অনুমোদিত এই কমিটির সদস্য পদ পেয়েছেন। তার সম্পর্কে বিস্তর অভিযোগ রয়েছে। অভিযুক্ত সুরাইয়া সুম্মা ডোনা আমেরিকান প্রবাসী তার মামার কাছ থেকে তার মামার নামে ফ্লাট ক্রয় ও রেজিষ্ট্রি করানোর নামে প্রায় ৭৮ লাখ টাকা ভাগিয়ে নিয়েছেন। যা নিয়ে পরবর্তী সময়ে ডোনা ও তার স্বামী এবং ডোনার বাবা-মার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়। বর্তমানে মামলাটি চলমান রয়েছে।
এছাড়া কমিটির ৯ নম্বরে নাম রয়েছে আব্দুল্লাহ হাসান মারুফের। তার বিরুদ্ধে মাদক, অস্ত্র ও নাশকতা সহ একাধিক মামলা রয়েছে। মারুফ কুষ্টিয়া শহর ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। উল্লেখিত এসকল ব্যক্তিরা যুবলীগের পদ পাওয়ায় ফুঁসে উঠেছেন ত্যাগী, পরিশ্রমী ও ক্লিন ইমেজের সাবেক ছাত্রলীগ নেতা-কর্মী ও সচেতন নাগরিকরা। এছাড়াও কমিটিতে জায়গা পেয়েছেন এর মধ্যে কয়েকজন বাদে কম-বেশি সবাই বিতর্কিত। যা নিয়ে শহর জুড়ে নানান সমালোচনা ও হইচই পড়ে গিয়েছে।
সচেতনমহল মনে করেন, রাজনীতি হচ্ছে মানুষের জন্য, সমাজের জন্য। এমন একটি জায়গায় যারা দায়িত্ব পেয়েছেন তারা যদি সমাজের এমন বিতর্কিত ব্যক্তি হন তাহলে সমাজ আরো অবক্ষয়ের দিকে যাবে। তাই এমন কমিটি পুর্নগঠনের দাবি জানান তারা।
এ বিষয়ে সদর উপজেলা যুবলীগের সভাপতি আবু তৈয়ব বাদশা বলেন, ত্যাগী, পরিশ্রমী ও ক্লিন ইমেজের নেতা-কর্মীদের বাদ দিয়ে বিতর্কিতদের নিয়ে এমন কমিটি কখনোই গ্রহণযোগ্য নয়। আমি আশা করবো, দলের স্বার্থে ত্যাগী, পরিশ্রমী ও ক্লিন ইমেজের নেতা-কর্মীদের সুযোগ দেওয়া হবে।
এ বিষয়ে কথা বলতে কুষ্টিয়া জেলা যুবলীগের সভাপতি রবিউল ইসলামকে ফোন করা হলে তিনি জানান, অনেকেই আমাদের কাছে নাম পাঠিয়ে ছিল। আমরা অনেকগুলো নাম-ই কেন্দ্রে পাঠিয়ে ছিলাম। আমরা আগামী এক মাসের মধ্যে বিতর্কিতদের নাম বাদ দিয়ে ত্যাগী ও পরিশ্রমীদের দিয়ে পূর্ণাজ্ঞ কমিটি গঠন করবো।
এদিকে রাতে কুষ্টিয়া জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক জিয়াউল ইসলাম স্বপন ফেইসবুকে এক পোস্ট দেন। তার ফেইসবুক পোস্ট হুবহু তুলে ধরা হলো- “অদ্য কুষ্টিয়া জেলা যুবলীগের এক জরুরী সিদ্ধান্ত মোতাবেক কুষ্টিয়া শহর (পৌর) যুবলীগের নব গঠিত আহবায়ক কমিটি (১৫/৫/২০২৪ প্রকাশিত) অনিবার্য কারনবশত স্থগিত করা হলো। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত কুষ্টিয়া শহর যুবলীগের আহবায়ক কমিটির সকল কার্যক্রম বন্ধ থাকবে। সাধারন সম্পাদক, মোঃ জিয়াউল ইসলাম স্বপন, জেলা যুবলীগ কুষ্টিয়া।”
Leave a Reply