পারস্পরিক স্বার্থে ‘বিশ্বের সবচেয়ে উদার’ বিনিয়োগ ব্যবস্থার সুবিধা নিয়ে চীনা ব্যবসায়ী সম্প্রদায়কে বাংলাদেশের প্রধান খাতগুলোয় বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
মঙ্গলবার বেইজিংয়ের সাংগ্রি-লা সার্কেলে চীনের ওয়ার্ল্ড সামিট উইংয়ে ‘বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে বাণিজ্য, ব্যবসা এবং বিনিয়োগের সুযোগ’ শীর্ষক এক সম্মেলনে চীনা ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তাদের তিনি এ আহ্বান জানান বলে গণমাধ্যমের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়।
শেখ হাসিনা বলেন, “এখন বাংলাদেশে বিনিয়োগের সময় এবং আমি আত্মবিশ্বাসী যে আমাদের হাতে হাত মিলিয়ে একসাথে আমরা দুর্দান্ত কিছু অর্জন করতে পারি।”
সফরের দ্বিতীয় দিন ওই সম্মেলনে বাংলাদেশের আইসিটি, পর্যটন, কৃষি প্রক্রিয়াকরণ শিল্প এবং উন্নয়ন খাতের সম্ভাবনার কথা কথা তুলে ধরেন সরকারপ্রধান।
তিনি বলেন, “আমরা আমাদের অবকাঠামো, জ্বালানি এবং লজিস্টিক খাতে বিনিয়োগকে স্বাগত জানাই।”
চার দিনের দ্বিপক্ষীয় সফরে সোমবার চীনের রাজধানী বেইজিংয়ে পৌঁছেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই সফর দুই দেশের মধ্যকার সম্পর্ককে ‘কৌশলগত অংশীদারত্ব’ থেকে ‘কৌশলগত বিস্তৃত সহযোগিতা অংশীদারত্বে’ উন্নীত করার কথা বলছে সরকার।
বেইজিংয়ে বাংলাদেশ দূতাবাস, বিআইডিএ, বিএসইসি এবং সিসিপিআইটি চায়না ওয়ার্ল্ড সামিট উইং, শাংরি-লা সার্কেল, বেইজিং-এ এই সম্মেলনের আয়োজন করে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমরা বিশ্বাস করি চীনা বিনিয়োগের উল্লেখযোগ্য সম্ভাবনা রয়েছে, বিশেষ করে নবায়নযোগ্য জ্বালানিসহ জ্বালানি খাতে। জলবায়ু-সহনশীল স্মার্ট ফার্মিং চীনের সাথে ক্রয়-ব্যাক ব্যবস্থাসহ কৃষি-প্রক্রিয়াকরণ শিল্পে সহযোগিতার সুযোগ উন্মুক্ত করে। তিনটি বিশেষ পর্যটন অঞ্চল প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা করা হচ্ছে যেখানে চীন রিয়েল এস্টেট এবং আতিথেয়তা খাতে বিনিয়োগ করতে পারে। এবং আমি চীনা বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশে পোর্টফোলিও বিনিয়োগ অন্বেষণ করার আহ্বান জানাচ্ছি।”
বিদেশি বিনিয়োগকারীদের কাছে আরও আকর্ষণীয় করে তোলার জন্য বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন পুঁজিবাজারের উন্নয়নে সক্রিয়ভাবে কাজ করছে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, “আমরা একটি শক্তিশালী বন্ড বাজার বিকাশে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি করেছি। আমরা ডেরিভেটিভ পণ্য প্রবর্তনের দ্বারপ্রান্তে রয়েছি, যা আমাদের আর্থিক বাজারে আরও বৈচিত্র্য আনবে এবং প্রসারিত করবে।”
বাংলাদেশ ডিজিটাল যুগকে ‘সর্বাত্মভাবে’ গ্রহণ করেছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, সরকার সক্রিয়ভাবে আইসিটি সেক্টরের প্রবৃদ্ধি জোরদার করছে, স্টার্টআপগুলোকে প্রণোদনা দিচ্ছে, টেক পার্কে বিনিয়োগ করছে এবং উদ্ভাবনা ও উদ্যোক্তাকে উৎসাহিত করে এমন একটি ইকোসিস্টেম গড়ে তুলছে।
তিনি বলেন, “আমাদের তরুণ উদ্যোক্তারা বিশ্ব মঞ্চে তাদের অবস্থান তৈরি করছে এবং আমরা আপনাদের এই আকর্ষণীয় যাত্রার শরিক হওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানাচ্ছি।
“আমরা নবায়নযোগ্য জ্বালানি, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং সবুজ প্রযুক্তিতে অসংখ্য সুযোগ গ্রহণের আহবান জানাচ্ছি।”
চীনের ভাইস মিনিস্টার অব কমার্স লি ফেই, চায়না কমিউনিকেশনস কনস্ট্রাকশন গ্রুপ কোম্পানি লিমিটেডের চেয়ারম্যান ওয়াং টংঝু, এইচএসবিসি চায়নার প্রেসিডেন্ট ও সিইও মার্ক ওয়াং, হুয়াওয়ের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট সাইমন লিন, বাংলাদেশে চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন, চীনে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মো. জসিম উদ্দিন এবং বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান লোকমান হোসেন মিয়া অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবায়াত-উল ইসলাম।
বাংলাদেশ ও চীনের কয়েকশ ব্যবসায়ী নেতা, বিনিয়োগকারী এবং উদ্যোক্তা এই সম্মেলনে যোগ দেন।
এছাড়া সফরকালে দুই দেশের বেশ কয়েকটি প্রকল্পের উদ্বোধনেরও ঘোষণা করার কথা রয়েছে।
বুধবার গ্রেট হল অব দ্য পিপল-এ চীনের প্রধানমন্ত্রী লি কিয়াং-এর নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশি প্রতিনিধি দলের দ্বিপাক্ষিক বৈঠক হবে।
এসময় দুই নেতার উপস্থিতিতে সমঝোতা স্মারকসহ বেশ কিছু নথিতে সই করা হবে।
পরে একই স্থানে চীনের প্রধানমন্ত্রী আয়োজিত মধ্যাহ্ন ভোজসভায় যোগ দেবেন শেখ হাসিনা। একই দিন বিকেলে চীনা প্রেসিডেন্ট শি চিনপিংয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রীর দেশে ফেরার কথা রয়েছে বৃহস্পতিবার।
Leave a Reply