পাকিস্তানে এক বাবা তাঁর কিশোরী মেয়েকে গুলি করে হত্যা করেছেন। তিনি স্বীকার করেছেন, মেয়ের টিকটক ভিডিও নিয়ে তাঁর আপত্তি ছিল। এর জেরে মেয়েকে হত্যা করেছেন।
বিবিসিকে এ তথ্য জানিয়েছে দেশটির পুলিশ। তারা বলছে, এই বাবার নাম আনোয়ার উল-হক। মেয়ের নাম হীরা আনোয়ার।
মেয়েটির বয়স ১৩ থেকে ১৪ বছরের মধ্যে। আনোয়ার উল-হকের মার্কিন নাগরিকত্ব রয়েছে। তাঁর মেয়েও মার্কিন নাগরিক।
আনোয়ার উল-হক সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র থেকে পরিবারসহ পাকিস্তানে ফিরে আসেন। গত মঙ্গলবার পাকিস্তানের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর কোয়েটায় তিনি তাঁর মেয়ে হীরাকে গুলি করে হত্যা করেন। তাঁর বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করা হয়েছে।
আনোয়ার উল-হক প্রথমে তদন্তকারীদের বলেছিলেন, অজ্ঞাতপরিচয়ের ব্যক্তিরা তাঁর মেয়েকে গুলি করে হত্যা করেছে। তবে পরে স্বীকার করেন, তিনিই মেয়েকে হত্যা করেছেন।
স্বীকারোক্তিতে আনোয়ার উল-হক বলেন, ভিডিও শেয়ারিংয়ের জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টিকটকে তাঁর মেয়ের পোস্টগুলো তিনি দেখেছেন। এগুলো তাঁর কাছে ‘আপত্তিকর’ মনে হয়েছে।
পুলিশ বলেছে, হীরা অনার কিলিংয়ের শিকার হয়েছে কি না, তাসহ অন্যান্য সব দিক তারা খতিয়ে দেখছে।
পাকিস্তানে ‘অনার কিলিং’ নতুন নয়। মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলোর তথ্যমতে, দেশটিতে প্রতিবছর কথিত অনার কিলিংয়ের নামে শত শত মানুষ হত্যার শিকার হয়। হত্যার শিকার যারা হয়, তাদের বেশির ভাগই নারী।
অনার কিলিংয়ে সাধারণত প্রাণ হারানো ব্যক্তির আত্মীয়স্বজনেরাই জড়িত থাকেন। তাঁরা বলে থাকেন, পরিবারের সম্মান রক্ষার্থে এই কাজ (হত্যা) করেছেন তাঁরা।
হীরা হত্যার বিষয়ে পুলিশের এক মুখপাত্র বলেন, মেয়েটির পোশাক-আশাক, জীবনধারা ও সামাজিক সম্মিলনের ব্যাপারে পরিবারের আপত্তি ছিল।
পরিবারটি ২৫ বছর যুক্তরাষ্ট্রে ছিল। পরিবারটি পাকিস্তানে ফিরে আসার আগে থেকেই হীরা টিকটকে ভিডিও পোস্ট করা শুরু করেছিল।
তদন্তকারীরা বলেছে, হীরার মুঠোফোনটি তারা নিজেদের জিম্মায় নিয়েছে। মুঠোফোনটি লক করা অবস্থায় আছে।
পুলিশ জানিয়েছে, এই হত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগে হীরার বাবার শ্যালককেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
বিচারে অনার কিলিং প্রমাণিত হলে, আসামিরা দোষী সাব্যস্ত হলে, তাঁদের বাধ্যতামূলকভাবে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ভোগ করতে হবে। আইনে পরিবর্তন এনে ২০১৬ সালে সাজার এই বিধান চালু করা হয়। এর আগের বিধানে ভুক্তভোগীর পরিবার ক্ষমা করলে আসামিরা কারাদণ্ড এড়াতে পারতেন।
Leave a Reply