উইমেন ডেস্ক ।। বুধবার, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২১, ৩১ ভাদ্র ১৪২৮ |
কক্সবাজরের টেকনাফে নির্বাচণী প্রচারণায় অংশ না নেওয়ায় মো. রফিক (২৮) নামের এক যুবককে গুলি করার অভিযোগ উঠেছে মেম্বার প্রার্থীর বিরুদ্ধে।
শুধু গুলিই নয়,ওই যুবককে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা চেষ্টা করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে টেকনাফ হৃীলা ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের রঙ্গিখালীর আলিখালী একালায় এ ঘটনা ঘটে।
অভিযুক্ত প্রার্থীর নাম জামাল হোসেন। তিনি ও তার তিন ছেলে শাহ আজম, শাহ নেওয়াজ এবং জুয়েল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত ইয়াবা কারবারি। জামাল হোসেন ও শাহ আজম ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে আনুষ্ঠানিকভাবে ১০২জন ইয়াবা কারবারির সঙ্গে অস্ত্র ও ইয়াবা জমা দিয়ে আত্মসমর্পণ করেছিলেন।
গুরুতর আহত মো. রফিক ওই এলাকার দিল মোহাম্মদের ছেলে। তার দুই পায়ে ৪টি গুলির পাশাপাশি মাথায় দুটি দায়ের কোপে জখম রয়েছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
ভুক্তভোগী পরিবারের দাবি, আগামী ২০ সেপ্টেম্বর স্থানীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে জামাল মেম্বারের পক্ষে প্রচারনা করতে রাজি না হওয়ায় তার ছেলে শাহ আজম, তার দুই ভাই শাহ নেওয়াজ ও জুয়েলসহ আরও কয়েকজন মিলে রফিককে হত্যার চেষ্টা করেন।
এদিকে রফিকের ওপর গুলিবর্ষণের পরপরই ফেসবুক লাইভে এসে অভিযুক্ত শাহ আজম দাবি করেন, হামলার শিকার রফিককে তার প্রতিপক্ষের লোকজন এলোপাতাড়ি গুলি করেছেন।এসময় হামলায় তার একজন চাচা, তার বাবা জামাল মেম্বারসহ আরও কয়েকজন আহত হয়েছেন। প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করতে দেখা গেছে তাকে।
তবে শাহ আজমের দাবি নাকচ করে দিয়ে আহত মো. রফিক বলেন, জামাল মেম্বারের ছেলে শাহ আজম,শাহ নেওয়াজ এবং জুয়েল প্রত্যেকে তার দু’পায়ে পায়ে অস্ত্র ঠেকিয়ে গুলি করেন। তারমধ্যে শাহ আজম একাই দুটি গুলি করেন।
এ সময় তিনি চিৎকার করলে ফাঁকা গুলিবর্ষণ করতে করতে পালিয়ে যান হামলাকারীরা। জামাল মেম্বার নিজেও ধারালো অস্ত্র দিয়ে রফিকের মাথায় আঘাত করেছেন বলে জানান রফিক।
এ ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে মামলা প্রক্রিয়াধীন বলে জানান আহত রফিকের স্ত্রী খতিজা বেগম। তিনি জানান, তার স্বামী রফিকের অবস্থার অবনতি হওয়ায় কক্সবাজার সদর হাসপাতাল থেকে চট্টগ্রামে রেফার করা হয়েছে।তবে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নিয়ে যাওয়ার কথা ভাবছেন তারা।
স্থানীয়দের দাবি, জামাল মেম্বার এবং তার ছেলে শাহ আজম পুরো রঙ্গিখালীকে ইয়াবা ব্যবসা ও অস্ত্রের ঘাঁটি হিসেবে পরিণত করেছেন। তারা যখনই বড় কোন ঘটনা ঘটান তখনই ফেসবুক লাইভে এসে অন্যের ঘাড়ে দোষ চাপানোর চেষ্টা করেন।
জানতে চাইলে জামাল মেম্বার বলেন, আমি টেকনাফে আছি এ ধরনের কোন ঘটনা ঘটেছে বলে আমার জানা নেই। এসময় তার ছেলে শাহ আজমের লাইভের বিষয়টি উল্লেখ করা হলে তিনি ফোনের লাইন কেটে দেন। পরে একাধিবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
এ বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও অভিযুক্ত শাহ আজমকে পাওয়া যায়নি।পরে একজন স্থানীয় গণমাধ্যম কর্মীকে দিয়ে গুলিবর্ষণের প্রতিবেদন না করার শর্তে প্রতিবেদককে এক লাখ টাকা ঘুষ দেওয়ার প্রস্তাব পাঠান অভিযুক্ত শাহ আজম।
ঘটনার বিষয়ে টেকনাফ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি হাফিজুর রহমান বলেন, ঘটনার পরপরই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে পুলিশ। লিখিত অভিযোগ পাওয়া গেলে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
প্রসঙ্গত, নির্বাচন কমিশন ঘোষিত আগামী ২০ সেপ্টেম্বর প্রথম দফায় স্থানীয় নির্বাচনে টেকনাফের হৃীলা ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ড থেকে মেম্বার প্রার্থী হিসেবে ফুটবল মার্কা প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন একই ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি সদস্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তালিকাভুক্ত ইয়াবা কারবারি জামাল হোসেন (ওরফে) জামাল মেম্বার।
এর আগে ইয়াবা ও অস্ত্র কারবারের সঙ্গে জড়িত থাকার অপরাধে কারাভোগের পর ছাড়া পান জামাল মেম্বার ও শাহ আজম। সম্প্রতি শাহ আজম ১০ হাজার ইয়াবাসহ ফের টেকনাফ পুলিশের হাতে ধরা পড়ে কারাগারে অন্তরীণ হন। তবে মাস না পেরুতে কারাগার থেকে বের হয়ে আসেন শাহ আজ।
Leave a Reply