ডিমের বাজার স্থিতিশীল করতে সাময়িক সময়ের জন্য নিত্যপণ্যটির আমদানি শুল্ক মওকুফ করার অনুরোধ জানিয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন।
মঙ্গলবার এনবিআর চেয়ারম্যানকে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়, অত্যাবশ্যকীয় পণ্য হিসেবে পেঁয়াজ, আলু ও ডিম আমদানিতে শুল্ক ছাড়ের বিষয়ে গত ২৯ আগস্ট এনবিআরের কাছে একটি প্রতিবেদন পাঠায় ট্যারিফ কমিশন।
এরপর ৪ সেপ্টেম্বর এনবিআর আলু ও পেঁয়াজ আমদানিতে শুল্ক প্রত্যাহার করে, যার ফলে এ দুই পণ্যের বাজারদরে স্থিতিশীলতা ফিরেছে। তবে কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী ডিমের বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি বলে চিঠিতে উল্লেখ করেছে ট্যারিফ কমিশন।
বর্তমানে ঢাকার বাজারে প্রতি ডজন ডিম কিনতে ১৭০ টাকা পর্যন্ত গুনতে হচ্ছে ভোক্তাদের। রাষ্ট্রায়ত্ত বিপণন সংস্থা টিসিবির হিসাবে, ডিমের স্থানীয় মূল্য গত এক মাসে ১৫ শতাংশ এবং এক বছরে ২০ দশমিক ৪১ শতাংশ বেড়েছে।
ট্যারিফ কমিশন বলেছে, দেশের বিভিন্ন জেলায় সাম্প্রতিক বন্যার কারণে পোলট্রি শিল্পের ক্ষতি হওয়ায় এবং পরিপূরক অন্যান্য খাদ্যপণ্যের দাম ‘অস্বাভাবিকভাবে’ বেড়ে যাওয়ায় বাজারে ডিমের সরবরাহ ব্যবস্থায় একধরনের চাপ সৃষ্টি হয়েছে।
এ পরিস্থিতিতে সুনির্দিষ্ট মেয়াদে আমদানিতে শুল্ক ছাড় দেওয়া হলে স্থানীয় পোল্ট্রি শিল্পের ওপর নেতিবাচক প্রভাবের সম্ভাবনা কম বলে মনে করছে কমিশন।
বর্তমান ডিম আমদানিতে মোট ৩৩ শতাংশ শুল্ক কর রয়েছে জানিয়ে কমিশন বলছে, এই শুল্ক কর অব্যাহত রাখলে আমদানি করা ডিম স্থানীয় বাজারে দামের ক্ষেত্রে তেমন প্রভাব রাখবে না। সেই কারণে আমদানি পর্যায়ে স্বল্প সময়ের জন্য শুল্ক কর প্রত্যাহার করা হলে ‘সাধারণ জনগণ স্বস্তির জায়গা খুঁজে পাবে’।
দেশের বাজারদর স্থিতিশীল রাখতে মঙ্গলবারই সাতটি কোম্পানিকে সাড়ে ৪ কোটি ডিম আমদানির অনুমতি দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এসব কোম্পানিকে আগামী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে ভিন্ন ভিন্ন পরিমাণ ডিম আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
এর আগে ২০২৩ সালের মাঝামাঝি সময়ে ডিমের দাম লাফ দেওয়ার পর বাণিজ্য মন্ত্রণালয় প্রতিটি ডিমের সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য ১২ টাকা বেঁধে দিয়েও দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেনি। পরে ১৫টি প্রতিষ্ঠানকে ১৫ কোটি ডিম আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়।
এরপর নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে ভারত থেকে ৬২ হাজার ডিমের একটি চালান আসার পর পাইকারিতে প্রতিটি ডিমের দাম তাৎক্ষণিকভাবে ৮০ পয়সা কমে গিয়েছিল। এরপর টানা দাম কমতে থাকে, এক পর্যায়ে ডজন ১২০ টাকার আশেপাশে নেমে আসে।
এরপর বাড়তে বাড়তে সেই দাম ১৭০ টাকায় উঠেছে। এরমধ্যে গত ৮ সেপ্টেম্বর বেনাপোল বন্দর দিয়ে ২ লাখ ৩১ হাজারের কিছু বেশি ডিম এলেও তা বাজারদরে কোনো প্রভাব ফেলেনি।
এরপর ১৬ সেপ্টেম্বর খুচরা পর্যায়ে প্রতিটি ডিমের দাম ১১ টাকা ৮৭ পয়সা বেঁধে দেয় কৃষি বিপণন অধিদপ্তর। তাতে প্রতি ডজন ডিম ১৪২ টাকা ৪৪ পয়সায় পাওয়ার কথা থাকলেও বাজারের চিত্র তা বলছে না।
Leave a Reply