উইমেন ডেস্ক: বুধবার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২১, ২৪ ভাদ্র ১৪২৮
কুষ্টিয়ার দৌলতপুরের বন্যাকবলিত রামকৃষ্ণপুর ও চিলমারী ইউনিয়নের অন্তত ৩০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকগণ রয়েছেন দুশ্চিন্তায়। দুই ইউনিয়নের ৩৭টি গ্রামে পানিবন্দি অবস্থা বিরাজ করায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো খোলা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।দীর্ঘ দেড় বছর পর আগামী ১২ সেপ্টেম্বর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার সিদ্ধান্তে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা খুশি হলেও খুশি হতে পারছে না চরাঞ্চলের পানিবন্দি স্কুলের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকগণ।
এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বন্যার পানি টলমল করছে, আবার অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের চারপাশে পানি রয়েছে। এছাড়াও দুই ইউনিয়নের সর্বত্র জলমগ্ন থাকায় পানি পাড়ি দিয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যাতায়াত করা শিক্ষার্থীদের জন্য কষ্ঠসাধ্য ও দুর্বিসহ হবে।এ অবস্থায় সংশ্লিষ্ট দফতর বন্যাকবলিত রামকৃষ্ণপুর ও চিলমারী ইউনিয়নের ৩০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম আপাতত বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এরমধ্যে রয়েছে রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নে ১১টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ১টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং চিরমারী ইউনিয়নের রয়েছে ১৪টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ৩টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও ১টি মাদরাসা। দৌলতপুরে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে ২১৭টি, মাধ্যমিক বিদ্যালয় রয়েছে ১০২টি এবং মাদরাসা রয়েছে ১৫টি।
আগামী ১২ সেপ্টেম্বর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার সরকারি নির্দেশনা ও সিদ্ধান্ত হওয়ায় দৌলতপুরের এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সব ধরণের প্রস্তুতি নিচ্ছে। ইতোমধ্যে অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিস্কার পরিচ্ছন্ন, ধোয়া-মোছা এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আঙিনা ও আশপাশের ঝোপ জঙ্গল কেটে তা পরিচ্ছন্ন করেছে। তবে এসব কার্যক্রম থেকে বিরত রয়েছে চরাঞ্চলের পানিবন্দি থাকা ৩০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।চিলমারীর জোতাশাহী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পড়া এক শিক্ষার্থীর বাবা আনোয়ার আলী জানান, তার বাড়ি থেকে স্কুলের দূরত্ব প্রায় ১ কি. মি.। এখন চারিদিকে পানি। নৌকা ছাড়া কোনো বাহন নেই যে তাতে করে স্কুলে যাবে তার মেয়ে। এমতাবস্তায় মেয়ের স্কুলে যাওয়া নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন তিনি।
রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের ইনসাফনগর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রেজাউল করিম বলেন, পরিস্থিতি দিন দিন খারাপের দিকে যাচ্ছে। এর মধ্যেও আমরা প্রতিষ্ঠান খোলার ও ক্লাসে পাঠদানের প্রস্তুতি নিচ্ছি। তবে অবস্থা আরও ভয়াবহ হলে পাঠদান কার্যক্রম সম্ভব নাও হতে পারে। চিলমারীর জোতাশাহী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এনামুল হক বলেন, আশপাশের বিভিন্ন এলাকা বন্যার পানিতে প্লাবিত হওয়ার কারণে শিক্ষার্থীদের প্রতিষ্ঠানে উপস্থিত হওয়া কঠিন হবে। বন্যার পানি কমে গেলেও রাস্তাঘাট ও বসতবাড়ি থেকে পানি না নামা পর্যন্ত ক্লাসে শিক্ষার্থী উপস্থিত হবে না বলে তিনি মনে করেন।
বন্যাকবলিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার বিষয়ে দৌলতপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সরদার মো. আবু সালেক জানান, বন্যাকবলিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা চাইলেও বন্যার পানি পাড়ি দিয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যাতায়াত তাদের জন্য ঝুকিপূর্ণ ও কষ্টসাধ্য হবে। তাই চরাঞ্চচলের ৪টি মাধ্যমিক ও ১টি মাদরাসার শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ রাখা হবে। তবে এ বিষয়ে ৯ সেপ্টেম্বর চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানা যাবে।দৌলতপুর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সাইদা সিদ্দিকা জানান, বন্যাকবলিত দুটি ইউনিয়নের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষ ও বিদ্যালয় প্রাঙ্গণ থেকে বন্যার পানি না নামা পর্যন্ত পাঠদান কার্যক্রম ব্যহত হবে।
বন্যাকবলিত এলাকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার বিষয়ে দৌলতপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শারমিন আক্তার বলেন, বিষয়টি সম্পর্কে আমরা অবগত আছি। নিয়মিত বন্যাদুর্গত এলাকা পরিদর্শন করছি। এছাড়াও উপজেলা শিক্ষা অফিসারের মাধ্যমে খোঁজখবর রাখছি। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে আলোচনা করে আমরা যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
Leave a Reply