ইবি প্রতিনিধি: কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের মেগা প্রকল্পে ৬ কোটির বেশি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। প্রকল্পের ঠিকাদার, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশলী ও ছাত্রলীগ নেতারা এর সঙ্গে জড়িত বলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে বেনামি চিঠি এসেছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব তদন্তে অভিযোগের সত্যতা পাওয়ার পর দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এবার তদন্তে নেমেছে।
দুদকের কুষ্টিয়া কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক ও অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা সাইদুর রহমান স্বাক্ষরিত এক চিঠি থেকে এসব তথ্য জানা গেছে। অনুসন্ধানের স্বার্থে সংশ্লিষ্ট প্রকল্পের তথ্য চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বরাবর একটি চিঠি পাঠিয়েছে দুদকের কুষ্টিয়া কার্যালয়। দুদকের প্রধান কার্যালয়ের এক চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে দুদক কুষ্টিয়া কার্যালয় এ তদন্তে নামে।
চিঠিতে বলা হয়, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন তৃতীয় পর্যায় শীর্ষক প্রকল্পের দ্বিতীয় প্রশাসন ভবনের সর্বশেষ চলতি বিলে দুটি আইটেমে ভুয়া বিল প্রদান করে ৬ কোটি ২৫ লাখ ২০ হাজার টাকা উত্তোলন ও ভাগ বাঁটোয়ারা করে আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে।
অনুসন্ধানের স্বার্থে সংশ্লিষ্ট প্রকল্পের রেকর্ডপত্রের পর্যালোচনা করা প্রয়োজন। রেকর্ডপত্রের মূল কপি দুর্নীতি দমন কমিশন কুষ্টিয়া জেলা কার্যালয়ে প্রেরণের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট প্রকল্পের যেসব রেকর্ডপত্র চাওয়া হয়েছে, তাঁর মধ্যে আছে- বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন তৃতীয় পর্যায় শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় দ্বিতীয় প্রশাসন ভবনের এ ব্লকের তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম তলা পর্যন্ত ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণ, বি-ব্লক ১০ তলা ভিত্তির ওপর ১০ তলা ভবন নির্মাণ প্রকল্পের বরাদ্দপত্র ও অনুমোদনপত্রের কপি। অনুমোদিত প্রাক্কলনের কপি, শিডিউলের কপি, দরপত্র বিজ্ঞপ্তি, দরপত্রের তুলনামূলক বিবরণী, চুক্তিপত্রের কপি, কার্যাদেশ, এমবি কপি ও চূড়ান্ত বিলের কপি।
অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন ও সংশ্লিষ্ট রেকর্ডপত্র; তদন্তের পরিপ্রেক্ষিতে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়ে থাকলে তার বিবরণ এবং সংশ্লিষ্ট রেকর্ডপত্র চেয়েছে দুদক কুষ্টিয়া কার্যালয়।
দুদক কুষ্টিয়া কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক ও অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা সাইদুর রহমান বলেন, ‘প্রধান কার্যালয়ে অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে এ ব্যাপারে একটি চিঠি ইস্যু হয়েছে। আমরা তদন্ত কার্যক্রম শুরু করেছি। গতকাল মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পাঠানো প্রকল্প সংশ্লিষ্ট রেকর্ডপত্র হাতে পেয়েছি। নথিগুলো এখনো খুলে দেখার সুযোগ হয়নি।’
গত বছরের নভেম্বরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বরাবর বেনামি চিঠি আসে। তাতে বলা হয়, মেগা প্রকল্পের আওতাধীন বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় প্রশাসনিক ভবনের পঞ্চম বিলে মোট ৬ কোটির বেশি টাকার ভুয়া বিল করেছেন ঠিকাদার। বিলের হিসাব ও সংশ্লিষ্ট নথি উড়ো চিঠিতে সংযুক্ত করা হয়েছে। সেই চিঠিতে আর্থিক সুবিধাভোগী ও সহযোগিতাকারী হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রকৌশলী, নির্বাহী প্রকৌশলী, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী, প্রকল্প পরিচালক, শাখা ছাত্রলীগের সাবেক ও বর্তমানে পদধারী ছয়জন নেতার নাম উল্লেখ করা হয়েছে।
অভিযোগ তদন্তে গত বছরের ডিসেম্বরে কমিটি গঠন করেন উপাচার্য। তিন মাস পর গত ৯ মার্চ তদন্ত কমিটি তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদনে আর্থিক কেলেঙ্কারির সত্যতা পাওয়া গেছে বলে। তদন্ত প্রতিবেদনে অভিযুক্তদের সাক্ষাৎকার এবং তথ্য-উপাত্ত রয়েছে। তিন পৃষ্ঠার তদন্ত প্রতিবেদনে অভিযুক্ত ঠিকাদাররাসহ সংশ্লিষ্টদের অনিয়মের বিষয়টি উঠে এসেছে।
এ বিষয়ে তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক সিন্ডিকেট সদস্য অধ্যাপক ড. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘তদন্ত টিমে আমাদের এক্সপার্ট হিসেবে ছিলেন খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. ইসমাইল সাইফুল্লাহ। তিনিসহ আমরা আমাদের পর্যবেক্ষণ দিয়েছি। তদন্ত প্রতিবেদন সিন্ডিকেটে যাবে। তারপর যা ব্যবস্থা নেওয়ার, ওখান থেকেই নেওয়া হবে।’
Leave a Reply