কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কুমারখালী শাখার সদস্য সচিব আসাদুজ্জামান আলীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ তুলে সংবাদ সম্মেলন করা হয়েছে। আজ শনিবার (০১ মার্চ) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে কুষ্টিয়া প্রেসক্লাবের এম এ রাজ্জাক মিলনায়তনে ফরিদা ইয়াসমিন নামে এক ভুক্তভোগী এই সংবাদ সম্মেলন করেছেন। এ সময় লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন তিনি।
লিখিত বক্তব্যে ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, আমি ফরিদা ইয়াসমিন, আমার বাসা কুমারখালী। আমি একজন সিঙ্গেল মাদার। আমার সন্তান নিয়ে ভাইদের বাসায় বসবাস করি। আমার সন্তানের নাম মোজবাউর হক হৃদয়। ছেলে যখন খুব ছোট তখন আমি আমার বাবার বাসায় চলে আসি। তাহার পর থেকে আমি একটি প্রি-ক্যাডেট স্কুলে চাকরি করিয়া আমার সন্তানকে লেখাপড়া করাচ্ছি। আমার ছেলে কুষ্টিয়া পরিটেকনিক কলেজে ৬ষ্ঠ সেমিস্টারে লেখাপড়া করছে। আমার স্বল্প আয়ে আমার ছেলের খরচ নির্বাহ করতে না পারায় কুমারখালী এম.এন পাইলট হাইস্কুল সংলগ্ন পার্কে অবস্থিত একটি ক্যাফেতে চাকরির ব্যবস্থা করি। আমার ছেলে সেখানে চাকরি করতো।
আমার ছেলের সাথে সমন্বয়ক আসাদুজ্জামান আলী কুষ্টিয়া স্কুলে লেখাপড়া করা কালীন সময় থেকে পরিচিত। ক্যাফের মালিক আমার ছেলের বিশ্বস্ততার কারনে ক্যাফের কার্যক্রম ও টাকা পয়সা আমার ছেলের নিকট রাখত। এ বিষয়টি আসাদুজ্জামান আলী জানতে পারিয়া গত এক মাস পূর্বে আমার ছেলের নিকট এক লক্ষ টাকা চাঁদা দাবি করে আলী। আমার ছেলে দিতে অস্বীকার করলে পুলিশ দিয়ে ধরিয়ে সহ নানা প্রকার হুমকি দেয়। আমরা চাঁদায় টাকা না দেওয়া গত ৯ ফেব্রুয়ারি কয়েকজন পুলিশ সহ একটি ছেলের সাথে নিয়ে বাসায় আসে এবং আমার ছেলেকে থানায় নিয়ে যেতে চাই। কেন নিয়ে যাচ্ছে আমি জানতে চাইলে বলে, কিছুক্ষণ পর চলে আসবে। তারপরে আমার ছেলে না আসলে আমি আলীকে ফোন করিলে বলে আমার এলাকায় চুরি হয়েছে তাই জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ থানায় নিয়ে গেছে, সকালে ছেড়ে দিবে। কিন্তু সকালে ছেড়ে না দিলে আমি সকালে থানায় যায় দেখি আলী বসে আছে। কি হয়েছে জানতে চাহিলে আলী বলে, কোর্টে যান। হৃদয়ের বিরুদ্ধে একটি ছোট মামলা হচ্ছে জামিন করে নিয়ে আসবেন। আমি কোর্টে যাওয়ার পরেও আমার ছেলে না পাঠালে আমি আবার আলীকে ফোন দিই, সে তখন জানায় আমার ছেলের বিরুদ্ধে নাশকতার মামলা হয়েছে। সেই থেকে আমার ছেলেটা জেল হাজতে আছে। পরবর্তীতে আমার সাথে আলীর দেখা হলে আমার ছেলের সাথে এমনটি কেন করেছ জানতে চাইলে আলী বলে চাঁদার টাকা চেয়েছিলাম দেন নি এখন বুঝেন।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিষয়টি নিরপেক্ষভাবে তদন্ত করা হোক। দ্রুত আমি আমার ছেলে মেজবাউল হক হৃদয়ের মুক্তি চাই। একই সাথে আলীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।
গত ৯ ফেব্রুয়ারি মেজবাউল হক হৃদয়কে (২১) গ্রেপ্তার করে কুমারখালী থানা পুলিশ। পুলিশের বিশেষ অভিযানে পদ্মপুকুর ঘাট এলাকা থেকে কুমারখালী পৌর ছাত্রলীগের উপ-দফতর সম্পাদক মেজবাউল হক হৃদয়কে আটক করা হয়।
এজাহার সূত্রে জানা গেছে, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা পদ্মপুকুর ঘাট এলাকায় নাশকতার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। এমন সংবাদের ভিত্তিতে হৃদয়কে আটক করা হয়। পরবর্তীতে তাকে নাশকতা ও বিস্ফোরক মামলায় আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।
এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কুমারখালী শাখার সদস্য সচিব আসাদুজ্জামান আলী বলেন, আমার বিরুদ্ধে প্রতিপক্ষের লোকজন বিভিন্নভাবে ষড়যন্ত্র করছে। আমার বিরুদ্ধে তারা যেসব অভিযোগ তুলেছেন, তাদের সব অভিযোগ মিথ্যা, ভিত্তিহীন ও ষড়যন্ত্রমুলক। আমাকে হেয়প্রতিপন্ন করতে ও ফাঁসাতে এসব করা হচ্ছে।
আলী আরও বলেন, আমি জীবনবাজী রেখেআন্দোলন করেছি। এখন আমাকে ফাঁসানোর জন্য অনেকেই উঠে পড়ে লেগেছেন। গত মঙ্গলবার বেলা ১২টার দিকে প্রতিপক্ষের প্রায় ২০০ থেকে ৩০০ মানুষ আমার বাড়িতে হামলা, ভাংচুর ও লুটপাট করে। বাসায় সেসময় আমি ও আমার আব্বু ছিলেন না। তারা টিভি, ফ্রিজ, আসবাবপত্র সহ বিভিন্ন জিনিসপত্র ভাংচুর করেছে। এসময় তারা নগদ টাকা ও মূল্যবান জিনিসপত্র লুট করে নিয়ে গেছে। প্রায় এক ঘণ্টা ধরে তারা এই তাণ্ডব চালিয়েছে তারা। এ ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।
হৃদয়কে গ্রেপ্তারের বিষয়ে কুমারখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সোলাইমান শেখ বলেন, বিষয়টি নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠুভাবে তদন্ত করে দেখা হবে। এবং যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
Leave a Reply