সত্যখবর ডেস্ক: মহামান্য হাইকোর্ট কর্তৃক সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিলের ২০১৮ সালের অবৈধ পরিপত্র বাতিলের ঐতিহাসিক সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে আজ ৫ জুন ২০২৪ বুধবার বিকাল ৫টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে সমাবেশ শেষে আনন্দ মিছিল করেছে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড, কেন্দ্রীয় কমিটি। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আল মামুন এর সঞ্চালনায় সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি কানিজ ফাতেমা। আরোও বক্তব্য রাখেন সংগঠনের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার দপ্তর সম্পাদক শরীয়তুল্লাহ, ঢাবি শিক্ষার্থী খোকন মিয়া, ঢাকা কলেজ শাখার সাধারণ সম্পাদক আল ইমাম, কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি ফিরোজ আহমেদ সুজন, ঢাকা জেলা শাখার সভাপতি ইকবাল হোসেন ভূইয়াসহ প্রমুখ নেতৃবৃন্দ।
সমাবেশের বক্তব্যে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আল মামুন বলেন, “হাইকোর্টের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানানোর পাশাপাশি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের নিকট দাবি আগামী ২৪ ঘন্টার মধ্যে এই সিদ্ধান্ত কার্যকর করে নতুন পরিপত্র জারির দাবি জানাচ্ছে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড। দাবি আদায় না হলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ঘেরাও কর্মসূচী পালন করা হবে। মহামান্য হাইকোর্ট কর্তৃক সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিলের ২০১৮ সালের অবৈধ পরিপত্র বাতিলের ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত দেশের তরুণ সমাজ স্বাগত জানাচ্ছে। এই বিজয় মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তির বিজয়। প্রশাসনে জামাত-শিবিরের প্রবেশ বন্ধ করার ক্ষেত্রে এই সিদ্ধান্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। কারণ স্বাধীনতা বিরোধী অপশক্তি জামাত-শিবিরের ক্যাডাররা লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জি সংবিধানকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে কোটা সংস্কার আন্দোলনের নামে ঢাবির ভিসির বাসভবনে অগ্নিসংযোগ, পুলিশের ওপর সন্ত্রাসী হামলা চালিয়ে কোটা বাতিলের অবৈধ পরিপত্র জারি করিয়েছিল। স্বাধীনতা বিরোধী অপশক্তির অবৈধ ও অযৌক্তিক আন্দোলনের কারণে সরকার ১ম ও ২য় শ্রেণীর সরকারি চাকরিতে নারী কোটা ১০ শতাংশ, মুক্তিযোদ্ধা কোটা ৩০ শতাংশ এবং জেলা কোটা ১০ শতাংশ বাতিল করে ২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর সংবিধান পরিপন্থী একটি পরিপত্র জারি করেছিল। ২০১৮ সালে জারি করা সংবিধান পরিপন্থী সেই পরিপত্রকে অবশেষে অবৈধ বলে সিদ্ধান্ত দিয়েছে হাইকোর্ট। এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে সংবিধান অনুযায়ী সকল শ্রেণির মানুষের সমান অধিকার প্রতিষ্ঠিত হলো। সংবিধান অনুযায়ী বৈষম্যহীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা, নারী কোটা, প্রতিবন্ধী কোটা, জেলা কোটা ও আদিবাসী কোটা পুনর্বহাল করার যৌক্তিক সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের ইতিহাসে মাইলফলক হয়ে থাকবে। সামাজিক সমতা নিশ্চিত করার জন্য সাংবিধানিক অধিকার কোটা ব্যবস্থা পুনর্বহালের সিদ্ধান্তকে এদেশের শিক্ষার্থী সমাজ ইতিবাচক হিসেবে গ্রহণ করেছেন। কারণ চাকরিতে কোটা ব্যবস্থা কখনোই বৈষম্য তৈরী করে না। কোটা ব্যবস্থা সবসময় বৈষম্য দূর করে চাকরি প্রাপ্তির ক্ষেত্রে সমতা নিশ্চিত করে। রাষ্ট্রে সকল শ্রেণি পেশার মানুষের সমান সুযোগ সৃষ্টি করে। সংবিধান ২৯ (৩) ক অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সমাজের যেকোন পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে সমাজের মূলধারায় ফিরিয়ে আনার জন্য রাষ্ট্র বিশেষ বিধান প্রবর্তন করতে পারবে। মুক্তিযোদ্ধা কোটা, নারী, আদিবাসী, প্রতিবন্ধী, পিছিয়ে থাকা জেলাসমূহের শিক্ষার্থীদের জন্য জেলা কোটা পুনর্বহাল করার মাধ্যমে চাকরিতে বৈষম্য দূর হলো। সকলের সমান সুযোগ নিশ্চিত হলো।”
সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি কানিজ ফাতিমা বলেন, “জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধাদের হাজার হাজার সন্তানরা এখনো বেকার জীবন যাপন করছেন। অনেক বীর মুক্তিযোদ্ধারা এখনো অনেক কষ্টে দিনাতিপাত করছেন। দেশ স্বাধীনের পর অনেক বীর মুক্তিযোদ্ধা বাড়িতে ফিরে দেখেছেন তাঁদের বাড়ি-ঘর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দিয়েছেন। বীর মুক্তিযোদ্ধাদেরকে সম্মান দেয়ার পাশাপাশি ক্ষতি কাটিয়ে উঠার জন্য জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মুক্তিযোদ্ধা কোটা চালু করেছিলেন। বঙ্গবন্ধু সরকার ১৯৭২ সালে ৫ সেপ্টেম্বর এক আদেশের মাধ্যমে ৩০% মুক্তিযোদ্ধা কোটার পাশাপাশি ১০% ক্ষতিগ্রস্থ নারী কোটা ও ৪০% জেলা কোটা রাখা হয়। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর নেমে আসে কালো অন্ধকার। ১৯৭৫-৯৬ সাল দীর্ঘ একুশ (২১) বছর মুক্তিযোদ্ধা কোটার কোন বাস্তবায়ন হয়নি। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার সাথে সাথেই বীর মুক্তিযোদ্ধাদের উপর নেমে আসে দুর্বিষহ অত্যাচার। স্বাধীনতা বিরোধী অপশক্তির ষড়যন্ত্রের কারণে এসময় বীর মুক্তিযোদ্ধারা রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক ভাবে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্থ হয়। তাঁদের সন্তানদেরকে তাঁরা তেমন পড়াশোনা করাতে পারেননি। অর্থনৈতিক দৈন্যদশা, যুদ্ধ ক্ষতিগ্রস্থ দেশ, পালিয়ে বেড়ানো সব মিলিয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধারা ২১ বছর কোনো সুবিধা পাননি। এমনকি তারা স্বাধীন ভাবে বেঁচে থাকার অধিকার পর্যন্ত হারিয়েছিলেন। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের নিকট দাবি অবিলম্বে হাইকোর্টের সিদ্ধান্ত কার্যকর করে নতুন পরিপত্র জারি করতে হবে। অন্যথায় আমরা কঠোর কর্মসূচী ঘোষণা করতে বাধ্য হবো।”
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার দপ্তর সম্পাদক শরীয়তুল্লাহ বলেন, “নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে ক্ষতি এবং বঙ্গবন্ধু হত্যার পর ২১ বছরে বীর মুক্তিযোদ্ধারা যে ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছিল তা আজো কাটিয়ে উঠতে পারেননি। মুক্তিযোদ্ধা কোটার মাধ্যমে তাঁদেরকে একটু মূল্যায়ন করার চেষ্টা করা হয়েছে। জেলা কোটার কারণে পিছিয়ে পড়া জেলার ছেলেমেয়েরা বিসিএসসহ বিভিন্ন চাকরিতে প্রত্যাশিত ক্যাডারে চাকরি পেয়েছেন। নারী কোটার কারণে নারীরা বিসিএসে প্রত্যাশিত ক্যাডারে চাকরি পেয়েছেন। আজকে নারীরা সচিব পর্যন্ত হতে পেরেছেন। সরকারের নিকট দাবি, অবিলম্বে মহামান্য হাইকোর্ট কর্তৃক সরকারি চাকরিতে কোটা পুনর্বহালের সিদ্ধান্তকে কার্যকর করে কোটার পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন করতে হবে। সংবিধান পরিপন্থী ২০১৮ সালের অবৈধ পরিপত্র জারির পিছনে ষড়যন্ত্রকারীদেরকে চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনতে হবে। অন্যথায় দেশব্যাপী কঠোর কর্মসূচী ঘোষণা দিবে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড।”
Leave a Reply