যৌক্তিক সময়ের মধ্যে নির্বাচন হলে দেশের বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা সম্ভব হবে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
বৃহস্পতিবার জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবসে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের কবরে শ্রদ্ধা নিবেদনের পর তিনি এ মন্তব্য করেন।
অন্তর্বর্তী সরকারের তিন মাস হলো, দেশের সংকট মোকাবিলায় তারা কি কোনো কার্যকর ভূমিকা রেখেছে- এমন প্রশ্নের জবাবে ফখরুল বলেন, ‘‘অবশ্যই, অবশ্যই রাখছে। কারণ তারা (অন্তর্বর্তীকালীন সরকার) অনেকগুলো কাজ করেছে, কাজ করছে।
‘‘আমরা বিশ্বাস করি, তাদেরকে যদি আমরা সকলে সহযোগিতা করি এবং উপযুক্ত সময়ে একটা যৌক্তিক সময়ের মধ্যে তারা নির্বাচন দিতে সক্ষম হয়; তাহলে এই জাতির সামনে যে চ্যালেঞ্জ আছে, সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা সম্ভব হবে।”
জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরতে গিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “১৯৭৫ সালের এই দিনে বাংলাদেশের দেশপ্রেমিক সৈনিক এবং জনতা তারা অভ্যুত্থানের মাধ্যমেই দ্বিতীয়বারের মতো আধিপত্যবাদ ও তাদের দোসরদের পরাজিত করে এবং যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে ধ্বংস করতে চেয়েছিলে- তাদেরকে পরাজিত করে স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে সামনে নিয়ে এসে তারা নতুন এক রাজনীতির সূচনা করে।
“সেই রাজনীতি ছিল বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের রাজনীতি, সেই রাজনীতি ছিলো স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের রাজনীতি, সেই রাজনীতি ছিল বাংলাদেশের আধিপত্যবাদ, গণতন্ত্রের শত্রুদের পরাজিত করে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার রাজনীতি। ”
ফখরুল বলেন, “১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর সিপাহী-জনতার বিপ্লবের পরে জিয়াউর রহমান দায়িত্ব পাওয়ার পর পুরো অবস্থাকে পরিবর্তন করলেন। তিনি একদলীয় শাসনব্যবস্থার পরিবর্তন করে বহুদলীয় গণতন্ত্র নিয়ে আসলেন, তিনি রূদ্ধবদ্ধ অর্থনীতিকে মুক্তবাজার অর্থনীতিতে পরিণত করেন এবং বাংলাদেশে একটা সম্ভাবনাময় অবস্থার সৃষ্টি করেন।
“জিয়াউর রহমানের প্রতিষ্ঠিত দল বিএনপি বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের যে দর্শন- সেটাকে প্রতিষ্ঠিত করতে দীর্ঘকাল তারা সংগ্রাম করছে, লড়াই করছেৃ জনগণকে সঙ্গে নিয়ে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে ক্ষমতায় গেছে তিনবার।”
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমান সপরিবারের নিহত হওয়ার পর সেনাপ্রধানের দায়িত্বে আসেন জিয়াউর রহমান। এরপর মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সেক্টর কমান্ডার খালেদ মোশাররফের নেতৃত্বে সেনাবাহিনীতে অভ্যুত্থান হয়, জিয়া হন গৃহবন্দি।
৭ নভেম্বর জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সঙ্গে যুক্ত মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সেক্টর কমান্ডার কর্নেল তাহেরের নেতৃত্বে পাল্টা অভ্যুত্থানে আটকাবস্থা থেকে মুক্ত হন জিয়া। এর মধ্য দিয়ে তিনি ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসেন, পরে দেশের প্রথম সামরিক আইন প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব নেন।
বিএনপি এই দিনকে ‘জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস’ এবং জাসদ ‘সিপাহী-জনতার অভ্যুত্থান দিবস’ হিসেবে পালন করে। অন্যদিকে গত ১৫ বছর ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ দিনটিকে ‘মুক্তিযোদ্ধা সৈনিক হত্যা দিবস’ হিসেবে পালন করত।
দিবসটি উপলক্ষে বুধবার বিকালে রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশন মিলনায়তনে হয় আলোচনা সভা। সেখানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন।
বৃহস্পতিবার বিকাল ৪টায় এফডিসির সামনে জাতীয়বাদী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন-জাসাসের উদ্যোগে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং শুক্রবার দুপুরে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে শোভাযাত্রা বের করবে বিএনপি।
আধিপত্যবাদ রুখে দেয়ার শপথ
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘আপনারা জানেন এই ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগের পতিত সরকার বিএনপিকে ধ্বংস করতে সবসময়ে ষড়যন্ত্র করেছে, নেতাকর্মীদের ওপর নির্যাতন করেছেন। এই আওয়ামী লীগ প্রায় ৬০ লক্ষ মানুষের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে এবং সহস্রাধিক মানুষকে গুম করে, হাজার হাজার লোককে হত্যা করে, নির্যাতন করে তারা এখানে ফ্যাসিবাদ প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছে, একদলীয় শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছে।”
“কিন্তু আল্লাহর অশেষ রহমতে ৫ অগাস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো এই আধিপত্যবাদকে পরাজিত করা হয়, ফ্যাসিস্টদের পরাজিত করা হয়। আজকের এ দিনে আমরা ৭ নভেম্বরের প্রধান নায়ক স্বাধীনতার ঘোষক, বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবক্তা, আধুনিক বাংলাদেশের রূপকার শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মাজারে এসে জিয়ারত করেছিৃতার প্রতি শ্রদ্ধা জনিয়েছি।”
বিএনপি মহাসচিব বলেন, “আমরা আজকে শপথ নিয়েছি যে- আমরা জনগণকে সঙ্গে নিয়ে সবসময়ই আধিপত্যবাদকে রুখে দেব, স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বকে সমুন্নত রাখব এবং এরজন্য প্রয়োজনে আরো বেশি শক্তিশালী আন্দোলন করব।”
ছাত্র-জনতার বিপ্লবকে সুসংহত করতে দেশের সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবে বলে প্রত্যাশা করেন তিনি।
সকাল ১১টায় মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, অধ্যাপক এ জেড এম জাহিদ হোসেন, জ্যেষ্ঠ নেতা শামসুজ্জামান দুদু, আমান উল্লাহ আমান, রুহুল কবির রিজভী, খায়রুল কবির খোকন, শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, আবদুস সালাম আজাদ, মীর সরাফত আলী সপু, রফিকুল ইসলাম, সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, সাইফুল আলম নিরবসহ কেন্দ্রীয় নেতারা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
এরপর আমিনুল হক, রফিকুল আলম মজনু, তানভীর আহমেদ রবিন, মোস্তফা জামানের নেতৃত্বে ঢাকা মহানগর উত্তর, দক্ষিণসহ বিভিন্ন অঙ্গসংগঠন-সহযোগী সংগঠনের তরফে বিএনপি প্রতিষ্ঠার কবরে শ্রদ্ধা জানানো হয়।
Leave a Reply