বাংলাদেশের বিভিন্ন খাত সংস্কারে অন্তর্বর্তী সরকার যেসব উদ্যোগ নিয়েছে তাতে সর্বাত্মক সহায়তা দিতে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন সংস্থাটির এশিয়া ও প্যাসিফিক বিভাগের পরিচালক পাওলা পামপালোনি। একই সঙ্গে দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে একসঙ্গে কাজ করার কথাও জানান তিনি।
বুধবার (৬ নভেম্বর) রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎকালে এসব জানান তিনি। ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাংলাদেশে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত এবং প্রতিনিধিদলের প্রধান মাইকেল মিলার এসময় উপস্থিত ছিলেন।
সাক্ষাৎকালে প্রধান উপদেষ্টাকে পাওলা পামপালোনি বলেন, ‘বার্তাটি খুবই স্পষ্ট। ইউরোপীয় ইউনিয়ন আপনার পাশে রয়েছে। আমরা আপনার সংস্কারকে সমর্থন করতে চাই।’
তিনি বলেন, ‘সংস্কারের জন্য অর্থের কোনো ঘাটতি হবে না। ইইউ বাংলাদেশের অন্তর্র্বতী সরকারকে প্রয়োজনীয় কারিগরি সহায়তাও দেবে।’
প্রধান উপদেষ্টা এ অঙ্গীকারের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিনি গত সেপ্টেম্বরে নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সাইডলাইনে ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লেয়েনের সঙ্গে তার সাক্ষাৎ স্মরণ করেন। যেখানে তারা বাংলাদেশের জন্য সমর্থনের উপায় নিয়ে আলোচনা করেছিলেন।
এসময় পামপালোনি বলেন, ‘আমরা আপনার বক্তব্যগুলো ইউএনজিএ-তে মনোযোগ সহকারে শুনেছি। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে এখন আমাদের এমন একজন আছেন যার সঙ্গে বাংলাদেশে কাজ করা সম্ভব। আপনাকে একা অনুভব করতে হবে না। আমরা সত্যিই সমর্থন দিতে আগ্রহী।’
ইইউ কর্মকর্তা বাংলাদেশকে আরও বিনিয়োগের সুযোগ তৈরি করতে উৎসাহিত করেন, যা আরও কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে এবং বাণিজ্য বাড়াবে।
রাষ্ট্রদূত মিলার প্রধান উপদেষ্টাকে জানান, ইউরোপীয় বিনিয়োগ ব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্ট জানুয়ারিতে বাংলাদেশ সফরের পরিকল্পনা করছেন। এটি বাংলাদেশের সঙ্গে আরও ব্যবসার সুযোগ সৃষ্টিতে কাজ করবে।
প্রধান উপদেষ্টা ইউরোপীয় ইউনিয়ন কর্মকর্তাদের বাংলাদেশের শ্রম অধিকার সংস্কারের প্রতি অঙ্গীকারের কথা পুনরায় নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, ‘আমরা নিশ্চিত করতে চাই যে আমরা আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখবো… কোনো লুকোচুরি হবে না। আমরা আর এই খেলা খেলতে চাই না।’
ইইউ কর্মকর্তারা বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কারের প্রতি অধ্যাপক ইউনূসের রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি প্রশংসা করেন। পামপালোনি বলেন, ‘এটি প্রথমবার যে আমরা এমন কিছুতে রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি দেখেছি যা আমরা নির্ধারণ করেছি। এক্ষেত্রে আমরা আপনার ওপর নির্ভর করছি।’
প্রধান উপদেষ্টা ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতি নেপাল ও ভারতের সঙ্গে আঞ্চলিক বিদ্যুৎ সংযোগ বাড়াতে কাজ করার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘নেপালে বিশাল জলবিদ্যুৎ রয়েছে, যা অপচয় হচ্ছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের কিছু সহায়তায় নেপাল, বাংলাদেশ এবং ভারত এতে উপকৃত হতে পারে।’
এসময় তিনি ইউরোপীয় ইউনিয়নকে বাংলাদেশের যুব সমাজের ওপর মনোযোগ দিতে অনুরোধ করেন। একই সঙ্গে দক্ষিণ এশীয় ফুটবল টুর্নামেন্টে বাংলাদেশি মেয়েদের সাম্প্রতিক সাফল্য তুলে ধরেন। পাশাপাশি তিনি অনুরোধ করেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন একটি ইউরোপীয় ফুটবল দল যেন বাংলাদেশে পাঠায়, যা বাংলাদেশি মেয়েদের অনুপ্রাণিত করবে।
Leave a Reply