দুই মাস বয়সী মিলির জন্ম নানাবাড়িতে। জন্মের পরই প্রথম বাবার বাড়ি যাবে সে। সঙ্গে ছিলেন মা, বাবা, মামা ও মামি। মামার ইজি বাইকে করে বাবার বাড়ি যাওয়ার সময় পথিমধ্যে ঘটে মর্মান্তিক দুর্ঘটনা।
ছোট্ট ইজি বাইকটি বাসের নিচে ঢুকে দুমড়েমুচড়ে যায়। ঘটনাস্থলেই মারা যান মা এবং মামা। গুরুতর আহত হন বাবা ও মামি। তবে মাথায় সামান্য আঘাত পেলেও অক্ষত থাকে এই নবজাতকটি।
ধ্বংসস্তূপের মধ্য থেকে যখন একে একে মরদেহ ও আহতদের বের করা হচ্ছিল, তখন নবজাকটিকে কোলে তুলে নেওয়ার মতো পরিচিত কেউই ছিল না। এমন সময় দুর্ঘটনাস্থলে আটকে পড়া অন্য একটি বাস থেকে এই দৃশ্য দেখে দ্রুত নেমে আসেন এক নারী। এসেই উদ্ধারকারীদের কাছ থেকে কোলে তুলে নেন ছোট্ট মিলিকে। মায়ের মমতায় তাকে আগলে রাখেন বুকে।
মাতৃরূপী এই নারীর নাম শাহনাজ পারভীন ননী। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক তিনি। দুর্ঘটাস্থলে শিশুটিকে বুকে আগলে রাখা ছবি ছড়িয়ে পড়ে ফেসবুকে। এই দৃশ্য দেখে নেটদুনিয়ায় প্রশংসায় ভাসছেন তিনি।
গত শনিবার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে বাগেরহাটের সাইনবোর্ড-শরণখোলা আঞ্চলিক মহাসড়কের মোরেলগঞ্জ ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের সামনে এই দুর্ঘটনা ঘটে।
দুর্ঘটনায় ঘটনাস্থলে মারা যান সিয়ামের স্ত্রী সুমী বেগম ও শ্যালক মজনু মোল্লা। গুরুতর জখম হন সিয়াম ও তার শ্যালকের স্ত্রী ঝুমুর বেগম। মাথায় চোট লাগে নবজাতক মিলির। এ সময় ফায়ারকর্মীরা এসে উদ্ধার করে সবাইকে স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে যান। প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে আহতদের পাঠানো হয় খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। মরদেহ দুটি এবং বিধ্বস্ত ইজি বাইক ও ঘাতক বাসটি নেওয়া হয় পুলিশ হেফাজতে। পালিয়ে যান বাসের চালক, হেরপার ও সুপারভাইজার।
আহত শিশু মিলি ও তার আহত স্বজনদের নিয়ে প্রথমে মোরেলগঞ্জ হাসপাতালে পরে সেখান থেকে খুলনা মেডিক্যালে যান শিক্ষক শাহনাজ পারভীন ননী। মিলির বাবা সিয়ামের অবস্থা সংকটাপন্ন। আইসিইউতে রাখা হয়েছে তাকে। ঘটনার পর থেকেই শাহনাজ নিজের সন্তানের মতো করেই আদর-মমতা দিয়ে পাশে রয়েছেন মিলির। তিনি চাকরি করেন উপজেলার ১৯ নম্বর রাজাপুর ডিবির পাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক পদে।
Leave a Reply