সচরাচর দস্যুদের হাতে জেলেরা জিম্মি হয়। এবার ঘটেছে ভিন্ন ঘটনা। জেলেদের হাতে বেদম পিটুনি খেয়ে আধমরা হয়েছে অস্ত্রধারী বনদস্যুরা। বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরার সময় সুন্দরবনের দুবলার চরের কয়েকজন জেলে এমন ঘটনা ঘটিয়েছেন। আজ সোমবার সকালে তাঁরা কোস্টগার্ডের হাতে দস্যুদের তুলে দিয়েছেন।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী খুলনার কয়রা উপজেলার কালনা আমিনিয়া কামিল মাদ্রাসার শিক্ষার্থী শাহজালাল সানা মুঠোফোনে বলেন, ‘বঙ্গোপসাগরের তীরে সুন্দরবনের দুবলার চরে শুঁটকি মৌসুম শুরু হয়েছে। বাবার মাছ ধরার ট্রলারে করে জেলেদের সঙ্গে সাগরে মাছ ধরতে এসেছি। গতকাল রোববার রাত আটটার দিকে সাগরে জোয়ারের পানিতে জাল তোলার প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। এমন সময় আমাদের ট্রলারের পাশে এসে থামে আরেটি ট্রলার। তাকিয়ে দেখি, ১১ জন দস্যু অস্ত্র হাতে দাঁড়িয়ে আছে।’
বনদস্যুরা জানিয়েছিল, তাঁরা মজনু বাহিনীর লোক। শাহজালাল সানা বলেন, ‘ডাকাত সরদারের নির্দেশে চার দস্যু আমাদের নৌকায় এসে ওঠে। তাদের কাছে দুটি বন্দুক। তাদের উদ্দেশে ডাকাত সরদার বলেন, “তোরা এই ট্রলার নিয়ে আশপাশের মাছ ধরার ট্রলার থেকে জেলেদের জিম্মি কর। আমরা দূরের জেলেদের ধরতে গেলাম।’ মজনু তাঁর বাহিনীর বাকি সাতজন সদস্যকে নিয়ে চলে যায় সামনের দিকে। দুই দস্যুর হাতে দুটি বন্দুক, অন্য দুজনের হাতে লাঠি। আমাদের ট্রলারের আশপাশে ছিল পরিচিত লোকজনের মাছ ধরার ট্রলার। কয়েকটি মাছ ধরার ট্রলার থেকে ৯ জেলেকে জিম্মি করে আমাদের ট্রলারে তোলে ডাকাতেরা।’
শাহজালাল সানা আরও বলেন, ‘ডাকাতের হতে জিম্মি সবাই আমার পরিচিত। আস্তে আস্তে সবাইকে বললাম, ডাকাতদের হাত থেকে বাঁচতে হবে। এরা অল্প কয়জন থাকতেই এদের ওপর হামলা করতে হবে। বাহিনীর প্রধান মজনুসহ বাকিরা ফিরে এলে আমাদের আর রক্ষা নেই। সবাই আমার কথায় রাজি হলেন। অস্ত্রধারী দুজন ট্রলারে বসে সিগারেট খাচ্ছিলেন। আর লাঠি হাতে দুজন দস্যু আরেকটি মাছ ধরার ট্রলারে ছিলেন।’
কীভাবে দস্যুদের কুপোকাত করা যায়, তা–ই নিয়ে চিন্তাভাবনা করতে থাকেন শাহজালাল সানা। তিনি বলেন, ‘আমি অস্ত্রধারী দুই দস্যুর কাছে গিয়ে বললাম, আমি মাদ্রাসায় পড়ি; এখানে এসেছিলাম এলাকার জেলেদের সাথে ঘুরতে। আপনারা আমাকেও জিম্মি করলেন। আমার পড়াশোনার এখন কী হবে? এক-দুই কথায় তাঁদের কাছাকাছি পৌঁছেই ট্রলারের গলুইয়ের ওপরে থাকা গরান কাঠ তুলে একজনের মাথা বরাবর আঘাত করলাম। অস্ত্রসহ তিনি পড়ে গেলেন পানিতে। দেরি না করে আরেকজন জেলেও দিলেন আরেক দস্যুর মাথায় আঘাত। তাঁর মাথা ফেটে রক্ত বেরিয়ে এল। একটি অস্ত্র তখন আমার হাতে। ওদিকে বাকি দুই দস্যু অন্য ট্রলার থেকে লাফ দিয়ে আমাদের ট্রলারে এলেন। তখন জেলেরা আচ্ছামতো ধোলাই দেন তাঁদের। পিটুনি খেয়ে সবাই পড়েন সাগরে। তারপর সাগর থেকে তিনজনকে টেনে তুলি ট্রলারে। একজন অস্ত্রসহ সাগরেই থেকে যায়।’
শাহজালাল সানা জানান, তিন দস্যুকে বেঁধে সুন্দরবনের দুবলার চরের কাছাকাছি পৌঁছাতে রাত তিনটা বেজে যায়। তখন তিনি মুঠোফোনে কোস্টগার্ডকে বিষয়টি জানান। আজ সকালে কোস্টগার্ডের সদস্যরা আসেন। তাঁদের হাতে ১টি অস্ত্র ও ৪০টি গুলি হস্তান্তার করি। ডাকাতদের নাম মনে নেই। ওই তিনজনের বাড়ি সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার মুন্সিগঞ্জ, খুলনার পাইকগাছা ও বাগেরহাটের মোংলায়।
এ সম্পর্কে দুবলার চরের জেলে আবদুর রউফ বলেন, ‘আমার বাড়ি সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার চাকলা গ্রামে। সেখানকার জেলেদের জিম্মি করেছিল দস্যুরা। শাহজালাল সানাসহ কয়েকজন জেলের সাহসিকতায় দস্যুরা ধরা পড়েছে। কয়েক বছর পর আবার ডাকাত নেমেছে। আমরা এ নিয়ে খুবই চিন্তিত।’ দস্যুতা দমনে প্রশাসনকে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার অনুরোধ করেন তিনি।
এ বিষয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে কোস্টগার্ড পশ্চিম জোনের এক কর্মকর্তা আজ বেলা দুইটার দিকে প্রতিবেদককে বলেন, এ বিষয়ে কোস্টগার্ডের অভিযান চলছে। পরে বিস্তারিত জানানো হবে। এখন কিছু বললে অপরাধীরা আগে থেকে সতর্ক হয়ে যাবে।
Leave a Reply