দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়া হামিদপুর ইউনিয়নের কয়লা খনি মেইন গেট এলাকায় জীবন ও বসত ভিটা রক্ষা কমিটির আয়োজনে কয়লা খনি কর্তৃক ক্ষতিপূরণের নামে মিথ্যা আশ্বাসের বিরুদ্ধে এলাকাবাসীর মানববন্ধন ও বিক্ষোভ।
গতকাল রবিবার সকাল ১০টায় বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির মেইন গেটের সামনে জীবন ও বসত ভিটা রক্ষা কমিটির সভাপতি মোঃ মতিয়ার রহমানের নেতৃত্বে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। ক্ষতিগ্রস্থ এলাকার প্রায় দেড় হাজার নারী পুরুষ ও স্কুল কলেজের ছাত্র-ছাত্রীরা মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিলে অংশগ্রহণ করেন। মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিলে জীবন ও বসত ভিটা রক্ষা কমিটির সভাপতি মতিয়ার রহমান বলেন, কয়লা উত্তোলনের কারণে চৌহাটি এলাকায় প্রায় দেড় হাজার বাসাবাড়ি কম্পনে ফেটে যাওয়ায়। আমরা ৪ দফা মেনে নেওয়ার জন্য খনি কর্তৃপক্ষকে বারবার তাগাদা দিয়েছি। কিন্তু আমাদের কোন কথা কয়লা খনি কর্তৃপক্ষ গুরুত্ব দিচ্ছেনা। ৪ দফা দাবি বাস্তবায়নের মধ্যে রয়েছে-পূর্বের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ফাটা বাড়ীর ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। ধোকাবাজি, মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে চৌহাটি বাসীকে বোঝানো বন্ধ করতে হবে। কয়লাখনি প্রতিষ্ঠাকালীন সময় চৌহাটি এলাকাবাসির সাথে সমঝতা চুক্তির ১০০% বাস্তবায়ন করতে হবে। চৌহাটি বাসির চলাচলের রাস্তা মেরামত করতে হবে।
আমাদের ৪ দফা দাবি বাস্তবায়নের জন্য তৎকালীন খনি কর্তৃপক্ষ ও পেট্রোবাংলা চেয়ারম্যান এবং স্থানীয় জনপ্রতিনিধি এবং সংসদ সদস্যকে অবগত করলেও আজ পর্যন্ত কোন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে দেখা যাচ্ছেনা। আমরা পরিবার পরিজন নিয়ে আর কতদিন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এই গ্রামে বসবাস করব? এই এলাকার ভূ-গর্ভ থেকে কয়লা তোলার কারণে প্রতিনিয়ত দেবে যাচ্ছে।
বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির কর্মকর্তা কর্মচারীরা লাভবান হলেও এলাকার গ্রাম ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। আমরা অতি দ্রুত মাননীয় বিদ্যুৎ জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা ও প্রেট্রোবাংলা চেয়ারম্যান এর কাছে অতিদ্রুত ৪ দফা বাস্তবায়ন করে ক্ষতিপূরণ প্রদান করা অনুরোধ করছি। সমাবেশে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম বলেন, স্কুল কলেজ মাদ্রাসা কবরস্থান রাস্তাঘাট সবই ধ্বংস হয়ে গেছে, কিছু বাকি নেই। কিন্তু আমরা এখান থেকে অসুস্থ রোগীকে নিয়ে হাসপাতালে যাব, রাস্তার বেহাল অবস্থা থাকায় অ্যাম্বুলেন্স্ও এই গ্রাম আসতে চায় না। তাহলে আপনারা বোঝেন আমরা কিভাবে জীবনযাপন করছি? চৌহাটি গ্রামে বসবাসরত মোসলেমা বেগম, মালেকা বেগম, আলিমুদ্দিন, গোলাম রহমান ও মাসুদ আলী জানান, নলকুপে পানি উঠছে না, এই এলাকায় তাপমাত্রা বেড়ে গেছে, যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়েছে, স্কুল কলেজ মাদ্রাসাগুলিতে যাওয়ার রাস্তা থাকলেও বর্ষাকালে চলাচল করা সম্ভব হয়না। আমরা এর প্রতিকার চাই ও ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
এই বিষয়ে বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী মোঃ সাইফুল ইসলাম এর সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, সার্ভে টিম গঠন করা হয়েছে পর্যাক্রমে সার্ভে করে অতিদ্রুত ক্ষতিগ্রস্থ গ্রামগুলির প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে এবং ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। আমরা ইতি মধ্যে ৮টি গ্রামকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া শুরু করেছি। মানববন্ধনে চৌহাটি গ্রামের প্রায় দেড় হাজার নারী-পুরুষ স্কুল কলেজ মাদ্রাসার ছাত্র ছাত্রী স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ মানবন্ধনে অংশগ্রহণ করেন। পরিশেষে সভাপতি বলেন, আমাদের আজকের এই সমাবেশে ৪দফা দাবী মেনে না নিলে আগামী ৯তারিখে কঠোর থেকে কঠোর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। ঘেরাও করা হবে কয়লা খনি। এর দায়ভার কয়লা খনি কর্তৃপক্ষকে নিতে হবে।
Leave a Reply