‘আমার স্ত্রী মাকছুদাকে মেরে ফেলেছি। আমি বাসায় আছি। আমাকে থানায় নিয়ে যান।’ বংশালে নিজের স্ত্রী মাকসুদা খাতুনকে (২৬) হত্যা করার পর থানায় ফোন করে একথা বলেন স্বামী ইব্রাহিম খান (৩৭)।গত শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে নাজিরা বাজারের সিক্কাটুলি লেনের ২৪নং বাসায় এ ঘটনা ঘটে।
হাতুড়ি দিয়ে মাথায় আঘাত করে এ হত্যার ঘটনা ঘটে। এরপর বাসায় গিয়ে ইব্রাহিমকে গ্রেপ্তার করে বংশাল থানা পুলিশ। এ ঘটনায় বংশাল থানায় ভুক্তভোগী মাকছুদার ভাই মোস্তাফিজুর রহমান বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন।
এদিকে গ্রেপ্তারের পর থানায় আসামি ইব্রাহিম খানের সঙ্গে কথা হয় এ প্রতিবেদকের। ইব্রাহিমকে এসময় বিমর্ষভাবে কাঁদতে দেখা যায়। তিনি বলেন, আমার স্ত্রী মাকসুদাকে আমি খুব ভালোবাসি। আমাদের দুজনেরই আগে আরেক জায়গায় বিয়ে হয়েছিল। আমরা সবকিছু ভুলে দুজনের একসঙ্গে বাঁচার স্বপ্ন দেখেছিলাম। আমাদের এক বছরের একটা মেয়েও (নাম বুশরা) আছে। কিন্তু আরেকজনের সঙ্গে স্ত্রীর সম্পর্ক কে মেনে নিবে? এটা নিয়ে প্রায় আমাদের ঝামেলা হতো। আমি তার পরিবারকেও অনেকবার জানিয়েছি।
ইব্রাহিম আরও বলেন, আমাকে না জানিয়ে একদিন আগে একজনের সঙ্গে দেখা করেছে। এটা নিয়ে আমার সঙ্গে তার ঝামেলা হয়। আজ বিকেলে আমি তাকে ভয় দেখানোর জন্য বাড়িতে থাকা একটা হাতুড়ি নিয়ে আসি। এরপর টেবিলের ড্রয়ারের ভেতর রাখি। আমার কিন্তু তাকে মারার ইচ্ছা ছিল না। এটা বলে কাঁদতে থাকেন ইব্রাহিম।
এরপর কেন মারলেন প্রশ্ন করা হলে তিনি আরও বলেন, সে (মাকসুদা) আমার সঙ্গে চিল্লাচিল্লি শুরু করে। এসময় কীভাবে দিয়ে কী হলো আমি বলতে পারব না। এটা বলে আবার কাঁদতে থাকেন তিনি। কিছু সময় পর তিনি কেঁদে বলেন, আমার বাবুটাও কাঁদতেছিল। গতকাল বুশরার প্রথম জন্মদিন পালন করলাম। ওকে এখন কে দেখবে? হত্যা করে না পালিয়ে থানায় জানালেন কেন- ইব্রাহিমকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, আমি মাকসুদা খুবই ভালোবাসি। সে চলে গেছে। আমি বেঁচে কী করব?
থানায় কীভাবে যোগাযোগ করলেন প্রশ্নে তিনি বলেন, আমি ৯৯৯ এ ফোন দিই। কিন্তু যোগাযোগ করতে পারিনি। পরে আমার পরিচিত একজন পুলিশ কর্মকর্তা ছিল। তাকে ফোন দিই। সে আমাকে বংশাল থানার পুলিশের নম্বর দেয়। এরপর আমি থানায় ফোন দিয়ে বলি, আমার স্ত্রী মাকসুদাকে মেরে ফেলেছি, আমি বাসায় আছি। আমাকে থানায় নিয়ে যান।
ভুক্তভোগী মাকসুদার চাচা আলহাজ নাজিম উদ্দিন আহমেদ বলেন, সিরাজগঞ্জের এনায়েপুর থানার গোপালপুল গ্রামের আব্দুল বাতেন খানের বড় মেয়ে মাকসুদা খানম। আর ইব্রাহিম খান নাজিরা বাজারের স্থানীয় মোজাম্মেল হকের ছেলে। পারিবারিকভাবেই তাদের বিয়ে হয়। ছেলে কম্পিউটার সায়েন্সে পড়ালেখা করে ফ্রিল্যান্সিংয়ের কাজ করত শুনতাম।
বাদী মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, পারিবারিকভাবেই আসার বোনের সঙ্গে ইব্রাহিমের বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকেই আমার বোনকে সন্দেহ করত। কিন্তু কোনো ডকুমেন্টস কখনো আমাদের দেখাতে পারেনি। সন্দেহ করার জন্য সে আমার বোনের ফোনে অ্যাপসের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করত। বাড়িতেও সিসি ক্যামেরা লাগিয়েছে। সন্দেহ করার কারণে আগের বিয়েতে তার ডিভোর্স হয়। আমার বোনকে হত্যা করেছে। আমরা এর বিচার চাই।
এদিকে এ ঘটনায় বংশাল থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম। তিনি জানান, আসামি স্বীকার করেছে তিনি তার স্ত্রীকে হত্যা করেছেন। খবর পেয়ে আমরা তাকে গ্রেপ্তার করি। এ ঘটনায় ভুক্তভোগীর ভাই বাদী হয়ে থানায় মামলা দায়ের করছেন।
Leave a Reply