জেলা প্রতিনিধি, কুষ্টিয়া:
কুষ্টিয়ায় জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ও কুষ্টিয়ায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীদের ওপর হামলার ঘটনায় মামলা হয়েছে। রোববার দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে হামলায় আহত এনসিপি’র প্রতিনিধি সুলতান মারুফ তালহা বাদী হয়ে কুষ্টিয়া মডেল থানায় মামলাটি দায়ের করেন।

মামলায় হামলার সঙ্গে জড়িত থাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, নাগরিক কমিটি ও ছাত্র অধিকার পরিষদের নেতাকর্মীসহ ১৪ জনকে এজাহারনামীয় আসামি করা হয়েছে। এ ছাড়া আরও ৫০ থেকে ৬০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে। পরে রাতেই পুলিশ মামলার ৪ নম্বর আসামি প্রকৌশলী তৌহিদকে গ্রেপ্তার করেছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কুষ্টিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোশাররফ হোসেন।

এর আগে রোববার রাত ৮টার দিকে কুষ্টিয়া সরকারি কলেজ মাঠে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। এতে আহত হয় প্রায় ১৫ জন। তাদের মধ্যে অন্তত ১০ জন কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হন।

আসামিরা হলেন- কুষ্টিয়া শহরের চৌড়হাস কাস্টম মোড় এলাকার মোকলেছুর রহমান আয়াস (২৫), কোর্টপাড়ার ঈদগাহপাড়া এলাকার সুজন (২৫), তার ভাই মানিক (৩৩), হাউজিং সি ব্লক এলাকার ইঞ্জিনিয়ার তৌহিদ (৩২), আড়ুয়াপাড়ার বিপুল (৩১), ত্রিমোহনীর সুমন (২৩), কবুরহাট এলাকার রাফি (২০), আহসান জয় (১৯), হাউজিং এলাকার আনভী আলিফ (২২), আসিফ আল আনাস (২৩), সাকিব (২২), রাসেল পারভেজ (৩৭), এস এম মুবাশ্বির (২৬), আলমাছ (৩৫)।

মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, রোববার সন্ধ্যায় আসামিরা দেশীয় অস্ত্র ও লাঠিসোঁটা নিয়ে শহরের কাটাইখানা মোড়ে অবস্থিত শহীদ আবরার ফাহাদ স্মৃতি গ্রন্থাগার ভাঙচুরের জন্য আসে। এ সময় বাদী বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সহযোদ্ধাদের নিয়ে তাদের প্রতিহত করার চেষ্টা করলে আসামিরা তাদের ধাওয়া দেয়। তারা সেখান থেকে কুষ্টিয়া সরকারি কলেজে মাঠে অবস্থান নিলে সেখানে গিয়েও আসামিরা হামলা চালায় এবং মারপিট করে। এতে প্রায় ১৫ হন আহত হন।

আহত অবস্থায় জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সুলতান মারুফ তালহা, আলী আহসান মুজাহিদ, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কুষ্টিয়া সরকারি কলেজের আহবায়ক জহিরুল ইসলাম জহির, সদস্য সচিব রেদোয়ান আফ্রিদি, কুষ্টিয়া পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের আহবায়ক জুবায়ের আহমেদ, বৈষম্যবিরোধী কুষ্টিয়া সদর উপজেলা শাখার যুগ্ম আহবায়ক ইব্রাহীম আলী, নয়ন হোসেনকে উদ্ধার করে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তারা কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

এদিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও নাগরিক কমিটির নেতাকর্মীদের ওপর হামলার ঘটনাকে পূর্বপরিকল্পিত সন্ত্রাসী হামলা আখ্যায়িত করে নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে জেলা জামায়াত। এছাড়াও বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) নেতাকর্মীরা।

এদিকে ঘটনার পর কুষ্টিয়ায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের চার নেতাকে সদস্যপদ বাতিলসহ সংগঠন থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ভঙ্গ, নীতিবহির্ভূত ও ষড়যন্ত্রমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার কারণে এ সিদ্ধান্ত দিয়েছে দলটি। অব্যাহতি প্রাপ্তরা হলেন- বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কুষ্টিয়া জেলা শাখার যুগ্ম সদস্য সচিব মুখলেছুর রহমান, সদস্য সুমন আহমেদ, কুষ্টিয়া সদর উপজেলা শাখার যুগ্ম সদস্য সচিব এসএম মুবাশ্বির মাহমুদ ও তালহা জুবায়ের নাবিল।

এ বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কুষ্টিয়া জেলা শাখার সদস্যসচিব মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, সংগঠনটির কার্যনির্বাহী কমিটির এক জরুরি সভায় নেতৃবৃন্দদের মতামত ও আলোচনা করে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যাদের অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে, তাঁরা প্রত্যেকেই সংগঠন বিরোধী ও ষড়যন্ত্রমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিল।

এ বিষয়ে কথা বলার জন্য অব্যাহতিপ্রাপ্তদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তাদের পাওয়া যায়নি।

এ বিষয়ে কুষ্টিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোশাররফ হোসেন বলেন, এ ঘটনায় মামলা হয়েছে। এক আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অন্যান্য আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত আছে।