দৌলতপুর প্রতিনিধিঃ সততা, আদর্শের প্রতি নিষ্ঠা ও সাংগঠনিক দক্ষতার স্বাক্ষর এবং আওয়ামী লীগের জন্য ত্যাগের জলন্ত উদাহরণ একজন দেশপ্রেমিক নাসির উদ্দীন মাষ্টার। ফুসফুস ক্যান্সারের কাছে পরাজিত হয়ে এখন শয্যাশায়ী। এক বুক অভিমান নিয়ে যমদূতের অপেক্ষায় প্রহর গুনছেন। তাই তিনি মনে করেন তাঁর শেষ ভরসা বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনা। জীবনের শেষ সেকেন্ড পর্বে চান একটু সম্মান। স্বীকৃতি না পাওয়ার কষ্ট মরণ যন্ত্রণার চেয়ে হাজার গুণ বেশী বলে মনে করেন এই বর্ষীয়ান বীর। আইনী লড়াইয়ের দীর্ঘ পথ পাড়ী দিয়ে তিনি আজ ক্লান্ত। তিনি জানান,সাবেক সংসদ সদস্য প্রয়াত এ্যাড. আজিজুর রহমান আক্কাস, সাবেক এম এন এ জহুরুল হক রাজা মিয়া,ক্যাপ্টেন জাহাঙ্গীর এঁর মত প্রতিথযশা বীরের সাথে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। ভারতের বেতাই প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের সনদসহ সকল প্রয়োজনীয় সকল কাগজপত্র জমা দিলেও নাসির মাষ্টারের কপালে জুটেনি মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে একটু সম্মান।
স্বাধীনতার জন্য জীবনবাজী রেখে যুদ্ধ করেছেন। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর নির্যাতন তাকে দমাতে পারেনি। ১৯৬৯’র গনঅভ্যুথানের সময় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এঁর মুক্তির দাবীতে আন্দোলন করার দায়ে কারাগারে ছিলেন ২৭ দিন। ডান কাঁধে পুলিশের আঘাতজনিত ব্যাথা বয়ে চলেছেন আজও। তখন তিনি কুষ্টিয়া সরকারি কলেজ ছাত্র সংসদের ছাত্রলীগ মনোনীত সদস্য ছিলেন। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের একনিষ্ঠ কর্মী। তৃণমূল পর্যায়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সংগঠন বিকাশে তার অবদান অসামান্য। স্বাধীন বাংলাদেশে সর্বপ্রথম রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের কমিটি গঠনে নাসির উদ্দীন মাষ্টার সাহসী ভূমিকা পালন করেন। ভেঙ্গে পড়ে মুসলিম লীগের দূর্গ।
স্বাধীন বাংলাদেশে ১৯৭২ সালের এপ্রিল মাসে আয়াতুল্লাহ মাস্টারকে সভাপতি এবং ফয়েজুদ্দিন মাস্টারকে সাধারণ সম্পাদক করে ৫১ সদস্য বিশিষ্ট রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের কমিটি গঠন করা হয়। নাসির উদ্দিন মাস্টার সেই কমিটির একজন নবীন সদস্য হলেও তিনি ছিলেন মূল উদ্যোক্তা।
সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের মৃত্যু হলে ১৯৭৩ সালে সর্বসম্মতিক্রমে বায়েতার রহমান কে সভাপতি ও নাসির উদ্দিন মাস্টার কে সাধারণ সম্পাদক করে পুনরায় ৫১ সদস্য বিশিষ্ট নতুন পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়। ২০০৩ সাল পর্যন্ত তিনি একই পদে বহাল থাকেন এবং নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করেছেন। পরবর্তীতে তিনি সভাপতি ও রেজাউল করিম মাষ্টার সাধারণ সম্পাদক মনোনীত হন। নব্বইয়ের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের সময় তৃণমূল পর্যায়ের বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ নেতাকর্মীদের সাথে নিয়ে গণতান্ত্রিক আন্দোলনে তিনি ছিলেন অগ্রসেনানী।
বর্তমানে কুষ্টিয়া জেলা পরিষদের প্যানেল সদস্য ও প্যানেল চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। মানবতার কল্যাণে,সমাজ ও দেশের উন্নয়নে নিরন্তর ছুটে চলা। মানবসেবা একমাত্র ব্রত তার। জনগণের সাথেই কাটে রাত-দিন।
দল পাগল একজন নাসির মাষ্টার। প্রস্তাবিত প্রাগপুর স্থল বন্দর বাস্তবায়নের দাবিতে গঠিত নাগরিক কমিটির সভাপতি নাসির উদ্দীন মাষ্টার। কুষ্টিয়াবাসীর প্রাণের দাবি বহুল প্রতীক্ষিত প্রস্তাবিত প্রাগপুর স্থলবন্দর বাস্তবায়নের তার উদ্যোগ প্রশংসনীয়। ২০১৭ সালে ১৭ সদস্যের একটি নাগরিক প্রতিনিধি দল নিয়ে ব্যক্তিগত উদ্যোগে ৪ বার ভারত সফর করেন নাসির উদ্দীন মাষ্টার।
জীবন সায়াহ্ণে তাঁর একটাই চাওয়া পদ্মা নদীর তীরে ভাগজোত অংশে ৫৬০ মিটার দীর্ঘ সেতু,দৌলতপুর উপজেলা কে দুইটি থানায় বিভক্ত করন, চিলমারী,রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের চরাঞ্চলে একটি হাসপাতাল। সম্প্রতি আনারুল ইসলাম নামে এক হিতৈষী ব্যাক্তি তিন বিঘা জমি দান করেছেন। এখানে গড়ে উঠবে আধুনিক হাসপাতাল। অন্যতম উদ্যোক্তা হিসেবে ভূমিকা পালন করেন নাসির উদ্দীন মাষ্টার। তিনি সকলের দোয়া কামনা করেন। একজন নাসির উদ্দীন মাষ্টার অক্ষয় হয়ে থাকবেন সকলের হৃদয়ে একজন আলোকবর্তিকা রূপে।
Leave a Reply