দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের চরমপন্থি সংগঠন গণমুক্তিফৌজের সশস্ত্র কিলার বাহিনীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির ওরফে লিপটন ও তার সহযোগী রাজুর দুই দিনের রিমান্ড মনজুর করেছে আদালত। ঝিনাইদহের শৈলকুপার চাঞ্চল্যকর তিন খুনের মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য মঙ্গলবার আদালত তাদের রিমান্ড মনজুর করেন।
এর আগে কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি) থানায় অস্ত্র মামলায় তাকে রিমান্ডে নেওয়া হয়েছিল। তখন নৌ পরিবহন মন্ত্রনালয়ে কর্মরত তার ভাই আলমগীর কবির বায়রন পুলিশ ও স্থানীয় প্রশাসনের উপর অবৈধ প্রভাব বিস্তার করেন। ফলে রিমান্ডের নামে তাকে জামাই আদরে রেখে কারাগারে পাঠানো হয়। এ নিয়ে যুগান্তরে প্রতিবেদন প্রকাশ হলে তোলপাড় শুরু হয়।
জানা গেছে, গত সোমবার দুপুরে ঝিনাইদহের আলোচিত তিন খুনের মামলায় তাদের গ্রেপ্তার (শ্যোন অ্যারেস্ট) ও রিমান্ড আবেদন করে পুলিশ। সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতের বিচারক
মোঃ মোখলেসুর রহমান তাদের দুইজনকে গ্রেফতার দেখিয়ে জেল হাজতে প্রেরণ করেন। একই সঙ্গে মঙ্গলবার রিমান্ড শুমানীর দিন ধার্য্য করেন।
গত ৬ জুন কুষ্টিয়ার দূর্বাচারা গ্রামে অভিযান চালিয়ে তিন সহযোগীসহ সন্ত্রাসী লিপটনকে গ্রেফতার করে সেনাবাহিনীর একটি দল। লিপটনের বিরুদ্ধে একাধিক হত্যা, গুম, অপহরণ ও চাঁদাবাজির মামলা রয়েছে বলে পুলিশ জানায়। তিনি কুষ্টিয়ার আ’লীগ নেতা মাহবুব-উল আলম হানিফের আস্থাভাজন হিসেবে পরিচিত।
জানা গেছে, গত ২১ ফেব্রয়ারি শৈলকুপা উপজেলার রামচন্দ্রপুর শ্বশানঘাটে কতিপয় অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা পুর্ববাংলার সামরিক কমান্ডার হানেফ আলী, লিটন ও রাইসুল ইসলামকে ব্রাশ ফায়ারে হত্যা করে। হত্যার পর জাসদের কালু বাহিনী পরিচয়ে ঝিনাইদহের গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে ক্ষুদে বার্তা পাঠানো হয়। এঘটনায় নিহত চরমপন্থি নেতা হানেফের ছোট ভাই সাজেদুল ইসলাম ইশা বাদী হয়ে শৈলকুপা থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। এই তিন খুনের সঙ্গে লিপটন ও রাজু জড়িত থাকতে পারে বলে পুলিশ সন্দেহ করছে।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা শৈলকুপা থানার ওসি (তদন্ত) শাকিল আহম্মেদ জানান, তিন খুনের মামলায় লিপটন ও রাজুকে শোন-এ্যারেষ্ট দেখানো হয়েছে। এ হত্যা মামলায় এখন পর্যন্ত ৯ জন গ্রেফতার হলেও কেউ আদালতে ১৬৪ ধারায় দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দেয়নি। মঙ্গলবার লিপটন ও তার সহযোগী রাজুর দুই দিনের রিমান্ড মনজুর হয়েছে।
আরও জানা গেছে, ৯০ দশকে কলেজ ছাত্রলীগের মিছিল-মিটিংয়ের মাধ্যমে রাজনীতিতে হাতেখড়ি লিপটনের। পরবর্তীকালে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে সক্রিয় চরমপন্থি সংগঠন গণমুক্তিফৌজে নাম লেখান। কুষ্টিয়া শহরে প্রকাশ্যে জামাই বাবুসহ একাধিক ব্যক্তিকে হত্যা করে আলোচনায় আসেন লিপটন। এরপর তার অপরাধ নেটওয়ার্ক আশপাশের জেলায় বিস্তৃত হয়। ফ্যাসিষ্ট আওয়ামী জামানায় কুষ্টিয়ার মাহবুব-উল আলম হানিফকে ফুলের তোড়া দিয়ে প্রকাশ্যে আসেন চরমপন্থি নেতা লিপটন। বড় জনসভা করে হানিফকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়। এরপর ঢাকায় হানিফের অফিসে বেশির ভাগ সময় কাটাতেন লিপটন। হানিফের চাচাতো ভাই আতাউর রহমান আতার সঙ্গে সখ্য গড়ে এলাকার রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করতেন তিনি। ভাই আলমগীর কবির বায়রন তার নানা অপকর্মের পৃষ্ঠপোষক বলে অভিযোগ আছে।
Leave a Reply