উইমেন ডেস্ক: বৃহস্পতিবার ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ইং তারিখে ৪৬.০০.০০০০.০৬৩.২৭.০০১.১৪.১৮৭ নং স্মারকে স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রালয়ের উপসচিব মোহাম্মদ ফারুক হোসেন স্বাক্ষরিত এক পত্রে কুষ্টিয়া পৌরসভার সার্ভেয়ার মান্নানের নিয়োগ সংক্রান্ত সকল কাগজ পত্র ও সার্ভিস বই মন্ত্রালয়ে প্রেরনের জন্য বলা হয়েছে। একই সাথে সার্ভেয়ার মান্নানের বিরুদ্ধে পৌরসভা আইন ২০০৯ এবং পৌরসভার কর্মচারী বিধিমালা ১৯৯২ অনুযায়ী বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য অনুরোধ করা হয় ।
যার অনুলিপি স্থানীয় সরকার বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (নগর উন্নয়ন), স্থানীয় সরকার বিভাগের যুগ্ম সচিব (নগর উন্নয়ন ২), স্থানীয় সরকারের উপপরিচালক, স্থানীয় সরকারের সিনিয়র সচিবের একান্ত সচিব বরাবর প্রেরন করা হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে ।
এছাড়াও বৃহস্পতিবার ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ইং তারিখে অপর একটি চিঠি কুষ্টিয়া পৌরসভার সার্ভেয়ার মান্নানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য দূর্নীতি দমন কমিশনের প্রধান কার্যালয়ে প্রেরন করা হয়েছে। যাহার স্মারক নং ৪৬.০০.০০০০.০৬৩.২৭.০০১.১৪.১৮৮ । স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব মোহাম্মদ ফারুক হোসেন উক্ত চিঠি প্রেরণ করেন ।
যার অনুলিপি স্থানীয় সরকার বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (নগর উন্নয়ন), স্থানীয় সরকার বিভাগের যুগ্ম সচিব (নগর উন্নয়ন ২), স্থানীয় সরকারের উপপরিচালক, স্থানীয় সরকারের সিনিয়র সচিবের একান্ত সচিব এবং কুষ্টিয়া পৌরসভার মেয়র বরাবর প্রেরন করা হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে ।
গত ৩ ফেব্রুয়ারি ২০২১ তারিখে প্রকাশিত বাংলা দর্পনে পরিবেশিত সংবাদে দেখা যায় কুষ্টিয়া পৌরসভার মান্নান ময়লা ফেলা গাড়ির হেলপার থেকে সার্ভেয়ার হয়ে গেছে জাল সনদের মাধ্যমে তার দাবিকৃত সার্ভেয়ার পাশ করা প্রতিষ্ঠানের কোনো অস্তিত্ব মেলেনি সংবাদপত্রের অনুসন্ধানে।
সেই প্রতিবেদকের কাছে মান্নান দাবি করে সে “দি ইস্টার্ন মর্ডার্ন সার্ভে ট্রেনিং ইনস্টিটিউট” হালিশহর, চট্টগ্রাম থেকে সার্ভে কোর্স করেছে। এই নামে কোনো দিন কোনো সার্ভে ইনস্টিটিউট ছিলনা । বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড কর্তৃক অনুমোদিত সার্ভে ইনস্টিটিউট এরতালিকায় এ ধরণের কোনো সার্ভে ইনস্টিটিউট নেই। উক্ত দাবি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন, অসত্য এবং জালিয়াতিপূর্ণ।
এই বিষয়ে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের ২৯ আগস্ট ২০২১ স্মারক নম্বর: ৪৬.০০.০০০০.০৬৩.২৭.০০১.১৪.৭৩০ মুলে উপ-পরিচালক স্থানীয় সরকার, কুষ্টিয়া মৃনাল কান্তি দে’কে তদন্ত করে সুপারিশ দাখিল করতে নির্দেশ দেন।
কুষ্টিয়া পৌরসভায় কর্মরত থাকা অবস্থায় কিভাবে সে চট্টগ্রামে সার্ভে ইনস্টিটিউটে গিয়ে কোর্স করে আসলো, তা কুষ্টিয়া পৌরসভার হাজিরা খাতা, স্যালারীশিট, এবং জাল সনদটি বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড বা ভূমি জরিপ অধিদপ্তর কর্তৃক যাচাই করলেই আসল সত্য বেরিয়ে আসবে ।
কুষ্টিয়া পৌরসভার ময়লার গাড়ির হেলপার হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন বর্তমান পৌরসভার সার্ভেয়ার আব্দুল মান্নান। হেলপার থেকে এখন পৌরসভার সার্ভেয়ার হিসেবে কর্মরত আছেন এই মান্নান। ১৯৯৮-৯৯ সালে সার্ভেয়ার হিসেবে দায়িত্বরত ছিলেন রামবাবু। এসিস্ট্যান্ট সার্ভেয়ারের পোষ্ট সৃষ্টি করিয়ে সার্ভেয়ার হিসেবে নিয়োগ পান আব্দুল মান্নান। ওই সময় পৌরসভার বর্তমান মেয়র আনোয়ার আলীও দায়িত্বে ছিলেন না। চাকুরিতে যোগদানের আগে সার্ভেয়ার আব্দুল মান্নান পৌরসভার ময়লা টানা গাড়ীর হেলপার ছিলেন। ওই সময় কুমিল্লার সালাম নামে এক দালালের মাধ্যমে চট্রগ্রাম থেকে সার্ভেয়ারের সাটিফিকেট ২০ হাজার টাকার বিনিময়ে তা কিনে সার্ভেয়ার হয়ে যান। সার্ভেয়ার হওয়ার পরই টাকার কুমির বনে গেছেন সার্ভেয়ার মান্নান। রাতারাতি আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়েছেন বিতর্কিত এই সার্ভেয়ার মান্নান। বছরে বছরে বেড়েছে তার আয়। শূন্য হাতে পৌরসভার সার্ভেয়ার হয়ে এখন তিনি ঘুরে বেড়ান বিলাসবহুল গাড়িতে। কুষ্টিয়াতে বিলাসবহুল বাড়িও বানিয়েছেন। গড়ে তুলেছেন নামে-বেনামে সম্পদের পাহাড়। এছাড়া স্ত্রী-শাশুড়ির নামেও অবৈধ সম্পদ গড়েছেন তিনি।
সার্ভেয়ার আব্দুল মান্নান যা বেতন পান তা দিয়ে খুব ভালো চলে তার সংসার। কিন্তু বিলাসবহুল বাড়ি করা সম্ভব নয়। পৌরসভার সার্ভেয়ার হওয়ার পরই এ যেন সম্পদের পাহাড় গড়েছেন। বিভিন্ন কাজে অনিয়ম-দুর্নীতি করে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন তিনি। শহরের বাড়াদি এলাকায় প্রায় শতবিঘা জমিও কিনেছেন। এতেই থেমে থাকেননি। পৌরসভার সার্ভেয়ার হওয়ায় সরকারি ডিসি আর কাটা জমিও বিক্রয়ের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
২৮ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার ২০২১ সালে কুষ্টিয়া পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম ও তার স্ত্রী মোছা: কামরুন্নাহার এবং কুষ্টিয়া পৌরসভার সার্ভেয়ার আব্দুল মান্নান এর স্ত্রী মোছা: রুপালী খাতুন এর নামে পৃথক দুটি মামলা করেছে দুদক কুষ্টিয়া। তাদের বিরুদ্ধে সম্পদ বিবরণীতে মিথ্যা তথ্য ও আয়ের সঙ্গে অসংগতিপূর্ণ অর্থ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সমন্বিত জেলা কার্যালয়, কুষ্টিয়ার উপ-সহকারী পরিচালক নীল কমল পাল বাদী হয়ে মঙ্গলবার দুপুরে মামলা দুটি করেন। এতে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন ২০০৪ এর ২৮(২) ও ২৭(১) ধারা এবং মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ২০১২ এর ৪(২) ও ৪(৩) ধারা ও দন্ডবিধির ১০৯ ধারায় অভিযোগ আনা হয়।
সেই মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, দুর্নীতি দমন কমিশনের সম্পদ বিবরণীতে কুষ্টিয়া পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম ৩৬ লক্ষ ২ হাজার ৬৪১ টাকা ৩০ পয়সা সম্পদের ভিত্তিহীন বা মিথ্যা তথ্য প্রদান করেছেন। জ্ঞাত আয়ের সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ ৫২ লাখ ১৯ হাজার ৫৭৩ টাকা ২৯ পয়সা সম্পদ অর্জন ও দখলে রাখাসহ হস্তান্তর/রুপান্তর/স্থানান্তর করার অপরাধ করেছেন। অন্যদিকে তাঁর স্ত্রী মোছাঃ কামরুন্নাহার তাঁর স্বামীর অবৈধ অর্থকে বৈধ করার কাজে সহায়তা প্রদান করেছেন।
একইভাবে কুষ্টিয়া পৌরসভার সার্ভেয়ার মোঃ আব্দুল মান্নানের স্ত্রী মোছা রুপালী খাতুন তাঁর দাখিলকৃত সম্পদ বিবরণীতে ৫২ লক্ষ ৭৩ হাজার ১৯৩ টাকা ৮৫ পয়সা সম্পদের ভিত্তিহীন বা মিথ্যা তথ্য প্রদান করেছেন। জ্ঞাত আয়ের সাথে অসঙ্গতিপূণ ৭২ লক্ষ ৩২ হাজার ২৪৮ টাকা ৮০ পয়সা সম্পদ অর্জন ও দখলে রাখাসহ হস্তান্তর/রুপান্তর/স্থানান্তর করার অপরাধ করেছেন বলে মামলা সূত্রে জানা যায়।
২০ অক্টোবর বুধবার ২০২১ সালে সকাল ১০টায় শহরের বাড়াদি মন্ডল পাড়ায় সার্ভেয়ার মান্নানের মুরগরী খামারের ঘড়ের বাইরে দিয়ে অবৈধভাবে পেতে রাখা ইলেকট্রিক তারে জড়িয়ে নূরজাহান (৩৫) নামে এক নারী শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। নিহত ওই নারী শ্রমিক একই এলাকার আবেদ আলীর মেয়ে। সার্ভেয়ার মান্নান ও তার সহযোগী হেলালের ক্ষমতা ও টাকার কাছে হার মেনে ছিলো মৃত নারী শ্রমিকের পরিবার। এখন পর্যন্ত এই বিষয়ে থানায় কোন মামলা হয়নি।
গত ২ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ইং তারিখে কুষ্টিয়ার বহুল প্রচারিত সংবাদ পত্র “দৈনিক সত্যখবর” এ সার্ভেয়ার মান্নানের সার্টিফিকেট জালিয়াতির বিষয়টি প্রকাশিত হলে মান্নানের এলাকাসহ সমগ্র কুষ্টিয়ার মানুষ আশাবাদী হয়, শান্তির নিঃশ্বাস ফেলে। সবাই আশা করে এবার হয়তো এই জালিয়াতি সার্ভেয়ার মান্নানের সঠিক বিচার হবে। শত শত মানুষ প্রার্থনা করে এই প্রতারক সার্ভেয়ার মান্নানের সর্বোচ্চ শাস্তি হউক।
নাম গোপন রাখার শর্তে একজন ভুক্তভোগী জানালেন তার দুর্দশার কথা, সার্ভেয়ার মান্নান আমার ভাইয়ের কাছ থেকে টাকা খেয়ে আমাদের জমি মাপতে আমাকে ঠকিয়েছে। আমার ভাইকে বেশি জমি দেখায়ে আমাকে কম দেয়া হয়। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ইহ জীবনে কাউকে শয়তান দেখতে চাইলে সার্ভেয়ার মান্নানকে দেখলেই চলবে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায় সার্ভেয়ার আঃ মান্নান বাড়াদীতে তার নিজস্ব ক্যাডার বাহিনী নিয়ে এলাকায় সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনা করে। বাড়াদী “আল্লা রাখা আল মামুর জামে সমজিদ” এর সামনে সোনা মিয়া মার্কেটে একটা দোকান ভাড়া নিয়ে সেখানে তার সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে সন্ধ্যা থেকে রাত ১১-১২ টা পর্যন্ত আড্ডা দেয়। জায়গাটি বাড়াদী মণ্ডল পাড়া, বাড়াদী মাঠ পাড়া, বাড়াদী স্কুল পাড়া সহ ফুলবাড়ি মিনাপাড়া যাওয়ার প্রবেশ মুখ। তবে সার্ভেয়ার মান্নান না থাকলেও তার ক্যাডার বাহিনী প্রায় সর্বক্ষণই সেখানে থাকে এবং পথ চলতি মানুষদের নানাভাবে উত্ত্যক্ত করে।
সার্ভেয়ার মান্নানের সন্ত্রাসী কার্যক্রমের মূল জায়গা হিসাবে পরিচিত সোনা মিয়া মার্কেটের দোকানটাকে ইঙ্গিত দিয়েছেন এলাকার সচেতন মহল। খোঁজ নিয়ে জানা যায় উক্ত দোকানটি মূলত চাউল ব্যবসার প্রতিষ্ঠান হিসাবে ভাড়া নিয়ে বর্তমানে তারা রীতিমত নিজেদের অপকর্মের অফিস বানিয়ে ফেলেছে। ৫-১০ বস্তা চাউল রেখে ১৫-২০ টা চেয়ার সাজিয়ে চলে রীতিমত সন্ত্রাসী আড্ডা। রাতে বহিরাগত বিভিন্ন সন্ত্রাসীর আবির্ভাব ঘটে, চলে ঘন্টার পর ঘন্টা সন্ত্রাসী আড্ডা। কাকে মারতে হবে, কাকে ধরতে হবে, কাকে এলাকা ছাড়া করতে হবে তার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় এই চাউলের দোকান তথা সার্ভেয়ার মান্নানের অফিস খ্যাত এই কু-কর্মের দোকান থেকেই।
Leave a Reply