উইমেন ডেস্ক : কুষ্টিয়ায় আবারো বেপরোয়া হয়ে উঠেছে মাদক ব্যবসায়ীরা। বিগত বছরে মাদকের বিরুদ্ধে সরকারের জিরো টলারেন্স ঘোষণার পর প্রশাসনের সাড়াশি অভিযানে অনেকটাই কোণঠাসা হয়ে পড়ে কুষ্টিয়ার চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ীরা। বর্তমানে প্রশাসনের অভিযান আগের মতো না থাকায় আবারও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে কুষ্টিয়া জেলার চিহ্নিত ওইসব মাদক ব্যবসায়ীরা। মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ধারাবাহিক প্রতিবেদনের এবারের পর্বে উঠে এসেছে এমন-ই একজন মাদক ব্যবসায়ীর নাম।
জানা যায়, কুষ্টিয়া পৌরসভাস্থ চর আমলাপাড়া এলাকার মৃত মকবুল হোসেনের বড় ছেলে জহির একজন চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী। তার বিরুদ্ধে রয়েছে একাধিক মাদকের মামলা। মাদকসহ গ্রেফতারও হয়েছে বহুবার। জহির পূর্বে থেকেই গাঁজা বিক্রি করে আসছে। গাঁজা বিক্রেতা হিসেবে মাদকসেবিদের কাছে জহির একজন অতি পরিচিত মুখ। তৎকালীন সময়ে কুষ্টিয়া জেলা স্টেডিয়াম মাঠ মাদক বিরোধী মহাসমাবেশে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামালের কাছে আত্মসমর্পণ করে জহির। কিন্তু আত্মসমর্পণের নাটক ওই পর্যন্ত শেষ। কিছুদিন না যেতেই শুরু মাদক বিক্রি। গড়ে তোলেন শক্তিশালী মাদকের সিন্ডিকেট। সূত্র জানায়, গাঁজা বিক্রেতা জহিরের রয়েছে তিন বউ। তার মধ্যে দুই বউ-ই জহিরের মাদক ব্যবসাতে প্রত্যেক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে জড়িত। এছাড়া জহিরের ছেলে-মেয়েদেরও মাদক ব্যবসার সাথে রয়েছে গভীর সংশ্লিষ্ঠতা।
জানা যায়, একাধিকবার গ্রেফতার হওয়া জহির বর্তমানে বিভিন্ন কৌশলে গাঁজা বিক্রি করে থাকে। মোবাইল কলের মাধ্যমে বিভিন্ন এলাকায় গাঁজার বড় বড় চালান পৌঁছে দেয় জহির। সুচতুর জহির ১ম স্ত্রী মালা খাতুন ওরফে কুটির কাছে সেরকম না থাকলেও ২য় স্ত্রী রোজিনা ও ৩য় স্ত্রীর কাছে অবস্থান করে বলে সূত্র জানায়। এর মধ্যে ৩য় স্ত্রীকে নিয়ে কুষ্টিয়ার শ্বশানঘাট এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকে বলে জানা গেছে। সেখান থেকেই তার ভাড়াটে সহযোগিদের মাধ্যমে মাদকসেবীদের কাছে গাঁজা পৌঁছে দেন জহির।
সূত্র জানায়, জহিরের মাদকের মূল চালান রাখা হয় ২য় স্ত্রী রোজিনার কাছে। সেখান থেকেই ভোররাতে ১ম স্ত্রী কুটির মেয়ের বাড়ী চরকুঠিপাড়াতে গাঁজা পৌঁছে দেন জহির। আর মেয়ের বাড়ী থেকে ১ম স্ত্রী কুটি গাঁজা সংগ্রহ করে খুচরা হিসেবে বিক্রি করে থাকেন। এছাড়া কুটি’র রয়েছে একাধিক সহযোগী। তার মধ্যে অন্যতম রমজান সাধু নামের এক নামকরা মাদকসেবী। রমজানের বাড়ীতে দিনরাত সবসময় গাঁজাসেবনের আড্ডা বসে। শহরের বিভিন্ন এলাকা থেকে রমজানের বাড়ীতে গাঁজা সেবন করতে আসে মাদকসেবীরা। আর তাদের কাছেই গাঁজা বিক্রি করেন রমজান।
এদিকে জহিরের ১ম স্ত্রী কুটি চরআমলাপাড়া বেড়িবাঁধ ও তার নিজ বাড়ীতে বসে দিনরাত গাঁজা বিক্রি করেন। তার বড় ছেলে নাইমের রয়েছে আমলাপাড়া পূণ্যবাবুর ঘাটে একটি চায়ের দোকান। চায়ের দোকানের অন্তরালে নাইম বহুদিন ধরে গাঁজা বিক্রি করেন বলে জানা যায়। কুটি’র ছোট ছেলে বিপ্লব ওরফে বিপু চরকুঠিপাড়া বেঁড়িবাধ মসজিদ সংলগ্ন এলাকায় দেদারছে গাঁজা বিক্রি করে চলেছেন। এদের সবার গাঁজা সরবরাহ করেন জহির। দু-একদিন পরপর-ই ভোররাতে গাঁজার বড় বড় চালান পৌঁছে দেন জহির।
এদিকে আরেক সূত্র নিশ্চিত করে, জহিরের ২য় স্ত্রী রোজিনা আমলাপাড়া পূণ্যবাবুর ঘাট সংলগ্ন এলাকায় ভাড়া বাসায় থেকে এই সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করে। সেখান থেকেই পাইকারি গাঁজা সেল দেয় রোজিনা। আর রোজিনার ভাই রাজিব গাঁজা ও ট্যাপেন্টা ট্যাবলেট বিক্রি করে। রাজীব একজন নামকরা ট্যাপেন্টা খোর। এই রাজীব পুলিশের কাছে একাধিকবার গ্রেফতার হয়েছে।
এদিকে জহিরের এই সিন্ডিকেট উল্লেখিত এলাকার প্রভাবশালীদের হাত করেই মাদক ব্যবসা করে আসছে বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করে। এসব প্রভাবশালীরা জহিরের কাছ থেকে নিয়মিত মাসোহারা নিয়ে থাকে।
সচেতনমহল মনে করে, এসব মাদক ব্যবসায়ীদের কারণেই আজ সমাজ ধ্বংসের দারপ্রান্তে। হাতের নাগালে এসব মাদকদ্রব্য সহজলভ্য হওয়ায় উঠতি বয়সী কিশোর-যুবকরা মরণঘাতি এসব নেশায় আসক্ত হয়ে পড়ছে। যার ফলশ্র“তিতে সমাজে ইভটিজিং, ছিনতাই, চুরির মতো ঘটনা ঘটছে অহরহ। তাই প্রশাসনের উচিত কঠোর ভাবে এসব মাদক ব্যবসায়ীদের দমন করা। স্থানীয়রা কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপারের হস্তক্ষেপ কামনা করেছে।
Leave a Reply