উইমেন ডেস্ক: মাদক ব্যবসায়ীদের নিয়ে দৈনিক সত্যখবর পত্রিকার ধারাবাহিক প্রতিবেদনের আজকের পর্বে থাকছে এক ঝাঁক মহিলা দিয়ে মাদক সিন্ডিকেট পরিচালনাকারী সাজিবের মাদক ব্যবসার গোপনীয় নানা তথ্য।
জানা যায়, কুষ্টিয়া পৌরসভাস্থ চর আমলাপাড়া এলাকার আমজাদ হোসেনের ছেলে সাজিব দীর্ঘদিন ধরে চালিয়ে আসছে মাদকের ব্যবসা। নিজের স্ত্রী, শ্বাশুড়ি, শালিকা, শালক ও আরো বেশ কয়েকজন মহিলা দিয়ে চলছে সাজিবের এই মাদক সিন্ডিকেট। সাজিব নিজে একজন চিহ্নিত ট্যাপেন্টাখোর (ট্যাপেন্টাডল ট্যাবলেট)। এক সময় এলাকায় ট্যাপেন্টাখোর বলেই পরিচিত ছিল সাজিব। ট্যাপেন্টা সেবন থেকেই ট্যাপেন্টা বিক্রি শুরু করেন তিনি। প্রথমদিকে অল্প সংখ্যক কাষ্টমারের মাঝে ট্যাপেন্টা বিক্রি করলেও ক্রমেই সাজিব তার মাদক ব্যবসার পরিধি বাড়াতে থাকেন। ট্যাপেন্টার পাশাপাশি শুরু করেন ইয়াবা বিক্রি। আর এসকল মাদকদ্রব্য বিক্রির জন্য বর্তমানে তৈরী করেছেন একটি বিশাল মাদক ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট। যে সিন্ডিকেটের বেশির ভাগ সদস্যই মহিলা। এসব মহিলা মাদক ব্যবসায়ী দিয়ে দিনের পর দিন চালিয়ে আসছে তার মাদকের কারবার। প্রশাসনের হাতে মাদকসহ একাধিকবার গ্রেফতার হয়েছেন মাদক সিন্ডিকেটের মূলহোতা এই সাজিব।
সূত্র জানায়, সাজিব প্রধানত ইয়াবা-ট্যাপেন্টা বিক্রি করার জন্য নিজের মোটর সাইকেল ব্যবহার করে থাকে। মোটর সাইকেলে করেই কুষ্টিয়া শহরের বিভিন্ন এলাকায় সেবনকারীদের চাহিদা অনুযায়ী ইয়াবা-ট্যাপেন্টা সেল করে।
সূত্রের দাবি, সাজিবের মোবাইল কললিস্ট চেক করলেই মাদক বিক্রি ও মাদক সিন্ডিকেট পরিচালনার বহু তথ্য বেরিয়ে আসবে। এদিকে সাজিব নিজের স্ত্রীকে দিয়েও ইয়াবা-ট্যাপেন্টা বিক্রি করে চলেছেন। তার স্ত্রী আফরোজা নিজ বাড়ীতে বসেই দেদারছে ইয়াবা ও ট্যাপেন্টা বিক্রি করে আসছে। তার বাড়ীতে দিন-রাত বিভিন্ন বয়সী মাদকসেবীদের আনাগোনা লক্ষ্য করা যায়। আফরোজার নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকে তার মা হাসিনা। সাজিবের বাড়ীর ঠিক সামনেই সামান্য কিছু তরকারি নিয়ে বসে থাকেন এই হাসিনা। হাসিনার বাড়ি চরকুঠিপাড়া এলাকাতে হলেও সে দিনরাত মেয়ের শ্বশুরবাড়ীর সামনেই অবস্থান করে। উদ্দেশ্য তরকারি বিক্রি নয়, নিজের মাদক ব্যবসায়ী মেয়ের নিরাপত্তার স্বার্থে সকাল থেকে রাত ১০-১১টা পর্যন্ত এই হাসিনা তার জামাই সাজিবের বাড়ীর সামনে থাকে। প্রশাসনের লোকজন যাতে হুট করে বাড়ীতে ঢুকে মেয়েকে গ্রেফতার করতে না পারে সেজন্যই হাসিনার এই কৌশল।
সূত্র জানায়, শুধু প্রশাসনের ভয়েই হাসিনার এ নজরদারি নয়, নিজেকেও মাদক ব্যবসায়ী হিসেবে এলাকাতে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। তরকারি ক্রয় করতে আসা এ অঞ্চলের বহু মহিলা তাদের মাদকাসক্ত স্বামীর জন্য ইয়াবা-ট্যাপেন্টা ক্রয় করে থাকেন। এমন বেশ কয়েকজন কাষ্টমার রয়েছে হাসিনার। এ কাষ্টমারগুলোকে হাসিনা নিজেই সার্ভিস দিয়ে থাকে।
এছাড়াও সাজিবের ইয়াবা-ট্যাপেন্টা বিক্রি করেন তার শালক হোসেন ও শালিকা পলি। এদেরও রয়েছে আলাদা আলাদা কাষ্টমার। সাজিবের শালক হোসেনের মাদক বিক্রির স্পট চর আমলাপাড়া-কুঠিপাড়া বেঁড়িবাধ অঞ্চল। এ এরিয়াতে হোসেন দিনের বেলা ছাগল পালার কৌশলে বিক্রি করলেও রাতে খোলামেলা ভাবেই ইয়াবা-ট্যাপেন্টা বিক্রি করেন বলে জানা যায়। সাজিবের শালিকা পলি তার শ্বশুরবাড়িতেই (চর আমলাপাড়া) দীর্ঘদিন ইয়াবা ও ট্যাপেন্টা বিক্রি করে আসছে। তার নির্দিষ্ট কিছু কাষ্টমারের কাছেই এ ইয়াবা-ট্যাপেন্টা বিক্রি করেন বলে সূত্র নিশ্চিত করে।
এছাড়াও সাজিবের যে এক ঝাঁক মহিলা মাদক ব্যবসায়ী রয়েছে তা তার শ্বাশুড়ি হাসিনার মাধ্যমেই। একাধিক সূত্র নিশ্চিত করে, এক সময়ের নামকরা মহিলা মাদক ব্যবসায়ী চর কুঠিপাড়া এলাকার কামু শাহ’র স্ত্রী পাখি। সে বিগত দিনে নামকরা গাঁজা ব্যবসায়ী হলেও বর্তমানে বিক্রি করছেন ইয়াবা ও ট্যাপেন্টা। সাজিবের শ্বাশুড়ি হাসিনার খুব কাছের বান্ধবী এই পাখি। বর্তমানে সাজিবের ইয়াবা ও ট্যাপেন্টা এই হাসিনার মাধ্যমেই পাখি সহ আরো বেশ কয়েকজন মহিলার হাতে পোঁছায়।
এদিকে মাদক ব্যবসায়ী পাখি নিজ বাড়ীতে বসেই নিজে ও স্বামী-ছেলের মাধ্যমে ইয়াবা-ট্যাপেন্টা বিক্রি করেন। পাখির স্বামী কামু শাহ একজন নামকরা মাদকসেবনকারী। তার পরিচিত মাদকসেবীরা-ই পাঁখির মূল কাষ্টমার। এমনকি তার বাড়ীতেই বসে সেবনকারীদের আড্ডা। পাঁখির ছেলে সাইফুলের বেলাতেও ঠিক একই ঘটনা। স্বামী ও ছেলের পরিচিত মাদকসেবীদের মাঝেই পাখি তার এ ব্যবসা চালিয়ে আসছে।
আরেকটি সূত্র জানায়, পাঁখির ছোট বোন কাজলীও এই মাদক সিন্ডিকেটের সদস্য। কাজলীও একজন চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী। পূর্বে বিভিন্ন জনের মাদক বিক্রি করলেও বর্তমানে এই সিন্ডিকেটের মূলহোতা সাজিবের মাল বিক্রি করছেন এই কাজলী। সে চর আমলাপাড়া এলাকাতে ভাড়া বাসায় বসবাস করেন। কাজলীর স্বামী রাজিবও একজন চিহ্নিত ব্যবসায়ী। স্বামী-স্ত্রী মিলেই এ মাদক ব্যবসা চালিয়ে আসছে বলে জানা যায়। কাজলীর স্বামী রাজিব মাদকসহ একাধিকবার প্রশাসনের হাতে গ্রেফতার হয়েছে।
এছাড়াও আরো বেশ কয়েকজন মহিলা মাদক ব্যবসায়ী নিয়ন্ত্রণ করেন এ সিন্ডিকেটের মূলহোতা সাজিব-আফরোজা-হাসিনা চক্র।
উল্লেখিত এসব মাদক ব্যবসায়ীদের বিষয়ে এলাকার সিংহভাগ মানুষ-ই অবহিত। এই মাদক ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের মূল হোতা সাজিবের হাতে রয়েছে এলাকার প্রভাবশালী ব্যক্তিগণ। যাদের নিয়মিত মাসোহারা দেন সাজিব। যার ভয়ে সাধারণ মানুষ প্রতিবাদ করতে সাহস পায় না।
সচেতন মহলের দাবি, এসব মাদক ব্যবসায়ীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া দরকার। যাতে আর কেউ সমাজে এধরনের কর্মকান্ড করতে না পারে। তাই এসকল মাদক ব্যবসায়ীকে অতিদ্রুত গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনার জোর দাবি জানিয়েছে এলাকাবাসি।
Leave a Reply