সত্যখবর ডেস্ক: সময় তখন বেলা ১১টা। প্রাক্-প্রাথমিক ও প্রথম শ্রেণির কক্ষে ঝুলছে তালা। দ্বিতীয় শ্রেণিতে পাঁচজন শিক্ষার্থী বসে আছে। আর অফিসকক্ষে বসে আছেন পাঁচ শিক্ষক। চার দিকে সুনসান নীরবতা, নেই কোনো পড়াশোনার আওয়াজ।
কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার উত্তর চাঁদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গত মঙ্গলবার এমনটাই দেখা গেছে। এ সময় দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্রী স্নেহা খাতুন জানায়, এলাকায় একজন মারা গেছেন। মোড়ে মোড়ে পুলিশ বসে আছে। ভয়ে কেউ স্কুলে আসে না। দ্বিতীয় শ্রেণিতে ৩৬ জনের মধ্যে মাত্র পাঁচজন এসেছে।
এ নিয়ে কথা হয় সহকারী শিক্ষক রুনা আক্তারের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘সম্প্রতি এলাকায় একটি হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। সে জন্য হামলা ও মামলার ভয়ে মানুষ গ্রাম ছেড়ে পালিয়েছে। থমথমে পরিবেশ। শিক্ষার্থীরা আসে না কিন্তু চাকরির কারণে আমরা প্রতিদিনই এসে বসে থাকি।’
বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আজিবুর রহমান জানান, বিদ্যালয়ে মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১৮৬ জন কিন্তু মঙ্গলবার উপস্থিত হয়েছে মাত্র ১৪ জন। তিনি উপস্থিতি বাড়াতে অভিভাবকদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করছেন।
এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সামাজিক দ্বন্দ্ব আধিপত্য বিস্তার ও পূর্ব শত্রুতার জেরে ১৪ মার্চ যদুবয়রা ইউনিয়নের উত্তর চাঁদপুর গ্রামের আমিরুল ইসলাম ওরফে নান্নুকে (৫২) হত্যা করে প্রতিপক্ষ। পুলিশ রাতে গ্রামের একটি কলাবাগান থেকে তাঁর লাশ উদ্ধার করে। তিনি ওই গ্রামের মৃত আব্দুল জলিলের ছেলে।
হত্যাকাণ্ডের ঘটনাকে কেন্দ্র করে ওই দিন রাতেই নান্নুর সমর্থকেরা বেশ কিছু ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুর ও লুটপাট করেন। এসব ঘটনায় কুমারখালী থানায় দুটি পাল্টাপাল্টি মামলা হয়েছে। মামলায় যদুবয়রা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান মিজানসহ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
মঙ্গলবার গ্রাম ঘুরে গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে মোড়ে পুলিশের অবস্থান দেখা গেছে। বেশ কিছু ঘরবাড়িতে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগের চিহ্ন রয়েছে। এতে অর্ধশত বাড়ি পুরুষশূন্য। গৃহপালিত পশু নেই। অনেকটা সুনসান ও থমথমে পরিবেশ বিরাজ করছে।
এ নিয়ে কথা হলে যদুবয়রা পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ আজাদ খান বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। হত্যা ও ভাঙচুরের ঘটনায় পৃথক দুটি মামলা হয়েছে।
বিদ্যালয় স্বাভাবিক করার বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান জানান, সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা বিদ্যালয়টি পরিদর্শন করেছেন। শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি বাড়াতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া হবে।
Leave a Reply