সত্যখবর ডেস্ক:সামনেই ভারতের ৫৪৩ আসনে লোকসভা নির্বাচন। প্রত্যেকটি রাজনৈতিক দলের পক্ষে নির্বাচনি প্রচারণায় জোড় তৎপরতা শুরু হয়েছে। বিজেপির লক্ষ্য গোটা দেশের ৩৭০টি আসনে জয়লাভ করা। বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোটের জয়ের লক্ষ্যমাত্রা ৪০০টি আসন। এর মধ্যে বাংলায় ৩৫টি আসনে লক্ষ্যমাত্রা বেধে দিয়েছে তারা। আর তা নিয়েই বিজেপিকে কটাক্ষ পশ্চিমবঙ্গের ক্ষমতাসীন দল তৃণমূল কংগ্রেসের। দলনেত্রী ও মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির চ্যালেঞ্জ ‘আগে ২০০ আসনে জিতে দেখাক তারপরে সাঁতার কাটার স্বপ্ন দেখবে।’
আসন্ন লোকসভা নির্বাচনের আগে রবিবার পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া জেলার ধুবুলিয়ায় প্রথম নির্বাচনি প্রচারণায় এসে বিজেপিকে হারানোর ডাক দেন মমতা। তিনি বলেন, বিজেপিকে বাংলা থেকে এবং দেশ থেকে দূর করুন। আমরা বিজেপির সাথে কোনো কম্প্রোমাইজ করব না। আমাদের পরিষ্কার কথা-বিজেপি যাবে, তৃণমূল থাকবে। বাংলায় একা চলছি, একা চলব। বাংলা থেকে বিজেপিকে বিদায় দেবো।
মমতার চ্যালেঞ্জ ‘বিধানসভা নির্বাচনে ওরা বলেছিল ২০০ পার কিন্তু ৭৭ থেমে গিয়েছিল। পরে ১৫ জন বিধায়ক তৃণমূলে চলে আসে। এবার বলছে ৪০০ পার। আগে ২০০ পার করুক, তারপরে সাঁতার কাটার কথা ভাববে।’
সভায় উপস্থিত সকলের উদ্দেশে মমতার বার্তা ‘আপনাদের স্বার্থেই বাংলায় ৪২টা আসনে তৃণমূল কংগ্রেসকে জেতাতে হবে। সিপিএমকে ভোট দেওয়া মানে বিজেপিকে ভোট দেওয়া, আবার কংগ্রেসকে ভোট দেওয়া মানেও বিজেপিকে ভোট দেওয়া। বাংলায় ওরা গো হারা হারবে। তাছাড়া ওদের না হারালে রেশনের চাল বন্ধ করে দেবে। আর তৃণমূল কংগ্রেসের সরকার থাকলে লক্ষীর ভান্ডার, স্বাস্থ্যসাথী, রেশন, কন্যাশ্রী, শিক্ষাশ্রী কোনো কিছুই বন্ধ হবে না।’
কেন্দ্রের ক্ষমতাসীন দল বিজেপিকে জুমলা, দাঙ্গাবাজ, মিথ্যাচার, কুৎসাকারী দল হিসাবে কটাক্ষ করে তৃণমুল নেত্রী বলেন, ‘বিজেপি থাকলে মানুষ একটা কথাও বলতে পারবে না। ওদের কাজ হচ্ছে মিথ্যা কথা বলা, মুসলিম-হিন্দুর মধ্যে বিভেদ তৈরি করা।’
কৃষ্ণনগর লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী মহুয়া মৈত্রের সমর্থনে এদিন প্রচারণায় উপস্থিত ছিলেন দলনেত্রী মমতা ব্যানার্জি।
দলীয় প্রার্থী মহুয়াকে পাশে নিয়ে মমতা বলেন, ‘বিজেপির বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলতো বলেই মহুয়াকে টার্গেট করা হয়েছে। ভোটে দাঁড়াবার পরেও মহুয়ার বাড়িতে গিয়ে তদন্তকারী এজেন্সি দিয়ে অভিযান চালানো হয়েছে, ওর বাবা-মাকে হেনস্তা করা হচ্ছে। আসলে ওদের কাজ হচ্ছে যেমন ভাবেই হোক মহুয়াকে হারানো। কিন্তু শত চেষ্টা করেও মহুয়াকে হারাতে পারবেন না।’
মহুয়া মৈত্রের বিরুদ্ধে নদীয়া জেলার কৃষ্ণনগরের রাজবাড়ীর গৃহবধূ অমৃতা রায়কে বিজেপির প্রার্থী করা নিয়েও কটাক্ষ করেছেন মমতা। তার অভিযোগ, ইংরেজ আমলে যারা বেইমানী করেছিল তাদের প্রার্থী করছে বিজেপি। তিনি বলেন, ‘এখানে যিনি দাঁড়িয়েছেন, ইংরেজ আমলে যখন যুদ্ধ চলছিল যে লোকটা লর্ড ক্লাইভের বন্ধু হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন, বাংলার স্বাধীনতা যুদ্ধকে খতম করার জন্য…সেই নামটাকে নিয়ে এসে…। মোদি বাবু আপনি কি ইতিহাস ভুলে গেলেন? আবার বলছে রাজমাতা, তিনি কোথা থেকে রাজমাতা হলেন?
কয়দিন আগে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে গোটা দেশে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) চালুর ঘোষণা দিয়েছিল কেন্দ্রীয় সরকার। কিন্তু সেই আইন যে পশ্চিমবঙ্গে কোনভাবেই চালু করতে দেওয়া হবে না, তাও এই দিনের সভা থেকে স্পষ্ট করে দিয়েছেন মমতা।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘কয়েকদিন আগে সিএএ চালু করেছে। আসলে সিএএ হচ্ছে মাথা। লেজটা হচ্ছে জাতীয় নাগরিকপঞ্জি’ (এনআরসি)। সিএএ করলেই এনআরসিতে পড়ে যাবেন। যারা আবেদন করবে, তারা বিদেশি হয়ে যাবে, অনুপ্রবেশকারী ও বাংলাদেশকারী হিসেবে চিহ্নিত হয়ে যাবেন, নাগরিকত্ব কেড়ে ডিটেনশন ক্যাম্পে পাঠিয়ে দেবে। ভুলেও আবেদন করবেন না।’ তার প্রশ্ন ‘২০১৯ সালে এই আইন পাস হয়েছিল তাহলে এতদিন কেন করল না? কেন বিজেপির লোকেরা এতে আবেদন করছেন না? আসলে নির্বাচনের আগে এটা বিজেপির ভাওতা ছাড়া আর কিছুই নয়।’
মমতার আশ্বাস ‘মোদির গ্যারান্টি জিরো, আর আমাদের গ্যারান্টি হিরো। মানুষ বঞ্চিত হোক, আমরা চাই না। বাংলায় সিএএ, এনআরসি করতে দেবো না। কাউকে রাজ্য ছাড়া করতে দেবো না।’ তার দাবি ‘দেশ আজ ভালো নেই, গণতন্ত্র বিপন্ন। মহিলা, সংখ্যালঘু, দলিত, কৃষকদের উপর অত্যাচার চলছে।’
Leave a Reply