1. mmisuk010@gmail.com : Misuk joy : Misuk joy
  2. admin@wordpress.com : root :
  3. rijukushtia@gmail.com : riju :

বেরিয়ে আসছে থলের বিড়াল: কুষ্টিয়া জেলা শিল্পকলা একাডেমীর সবখানে কালচারাল অফিসার সুজন ও তার স্ত্রী’র আধিপত্য!

  • আপডেট টাইমঃ সোমবার, ১৩ মে, ২০২৪
  • ৫৩ মোট ভিউ
সুজন রহমান (ফাইল ছবি)

সত্যখবর ডেস্ক: কুষ্টিয়া জেলা শিল্পকলা একাডেমীর কালচারাল অফিসার সুজন রহমানের বিরুদ্ধে যেকোন সরকারি অনুষ্ঠানের সাংস্কৃতিক প্রোগ্রামে নিজের সংগঠনের শিল্পী এবং তার অনুসারী শিল্পীদের অধিক প্রাধান্য, জেলার বহু গুনী ও প্রতিভাবান শিল্পীদের সুযোগ তৈরী না করে দেওয়া, শিল্পকলার যেকোন অনুষ্ঠানে সুজন ও তার স্ত্রীর আধিপত্য এবং শিল্পকলাকে নিজ বাড়ীর ন্যায় ব্যবহার, যেকোন অনুষ্ঠানের আত্মীয়করণ করা সহ একাধিক অভিযোগ নিয়ে একাধিক পত্রিকায় ধারাবাহিক সংবাদ প্রকাশ হচ্ছে। সংবাদের প্রকাশের পর বেরিয়ে আসছে সুজনের অনিয়মের বহু তথ্য। জেলা শিল্পকলার কালচারাল অফিসার সুজন রহমান হলেও শিল্পকলার সব বিষয়ে তার স্ত্রী’র তদারকি লক্ষ্য করা গেছে।

এ নিয়ে শিল্পকলা সংশ্লিষ্ট ও কুষ্টিয়ার একাধিক শিল্পীর বক্তব্য, শিল্পকলাতে সুজন রহমান নয়, তার স্ত্রী যা বলে তা-ই হয়। আর সুজন রহমানের স্ত্রীর কারণেই বহু শিল্পী এখন শিল্পকলাতে পদার্পণ করেন না। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিগত সময়ে কুষ্টিয়া জেলা শিল্পকলা একাডেমির আয়োজনে ‘কুষ্টিয়ার কণ্ঠ’ নামক একটি গানের প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। সেখানেও শিল্পীদের সাথে প্রতারণা করা হয়েছে বলে দাবি করেন একাধিক শিল্পী। সুজন রহমান ও এই প্রোগ্রামে দায়িত্বশীলদের পক্ষপাতিত্ব মূলক আচরণ সে-সময় ই চোখে পড়ার মতো হলেও ভয়ে মুখ খোলেনি কোন শিল্পী। সুজন রহমানের অনুসারী শিল্পীরা-ই কুষ্টিয়ার কণ্ঠ প্রতিযোগিতায় শীর্ষ স্থানগুলো দখল করে নিয়েছিল। যা নিয়েও সেসময় বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছিল।

এদিকে খোঁজ নিয়ে আরো জানা যায়, জেলা শিল্পকলার কালচারাল অফিসার সুজন রহমানের স্বেচ্ছাচারিতায় এই জেলার শিল্প-সংস্কৃতি আজ প্রায় ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। নিচের ইচ্ছামত কাজ, ক্ষমতার অপব্যবহার এবং স্বজন প্রীতি সহ নানা অভিযোগ এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। নিজের ক্ষমতা এবং প্রভাবকে কাজে লাগিয়ে দীর্ঘ ১২ বছর যাবৎ তিনি দখল করে রেখেছেন জেলার ঐতিহ্যবাহী শিল্পকলা একাডেমী। জেলার বিভিন্ন সরকারী এবং বে-সরকারী অনুষ্ঠানে তিনি তার পছন্দের শিল্পী এবং সংগঠনকে দিয়ে পরিবেশনা করিয়ে থাকেন বলে তার বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগ রয়েছে। এছাড়াও শিল্পকলা একাডেমীর বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংগ্রহণ তার অনুমতি ব্যতিত কোন ভাবেই সম্ভব নয়। যার ফলে প্রতিভা থাকা সত্ত্বেও জেলার বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে নিজেদের তুলে ধরতে পারেন না অনেকেই। এই কারণেই জেলায় নতুন করে কোন গুণী শিল্প বা শিল্প সংগঠন গড়ে উঠছে না বলে অনেকের দাবী।

অনেক শিল্পীদের মতে, পুরো জেলা শিল্প-সংস্কৃতি একজনের হাতে বন্দী। জানা যায়, জেলা শিল্পকলা একাডেমীর আয়োজনে প্রতি বছর ১লা বৈশাখ, বিশ্বকবি রবীন্দ্রঠাকুরের জন্ম বার্ষিকী ও মৃত্যু বার্ষিকী সহ বেশ কয়েকটি বড় এবং আর্ন্তজাতিক মানের অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। এছাড়াও জেলা শিল্পকলার দিক দিকনির্দেশনায় এবং তত্ত্ববধায়নে প্রতিছবর উপজেলা গুলোতেও নানান সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ব্যতিতও জেলা শিল্পকলার আয়োজনে পিঠা উৎসবসহ আরো বেশ কিছু এতিহ্যবাহী অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জেলা প্রশাসন বা শিল্পকলার আয়োজনে কোন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হলে সেখানে জেলা কালচারাল অফিসার সুজন রহমান এবং তার স্ত্রী রোখসানা পারভীন লাকির দখলে থাকে অনুষ্ঠানের অধিকাংশ সময়। যার ফলে জেলার অন্যান্য শিল্পীরা তাদের প্রতিভা প্রদর্শন থেকে বঞ্চিত হয়ে থাকে। যদিও তাদের ভয়ে কোন শিল্পী বা প্রতিষ্ঠান মুখ খুলতে চান না। তবে বিভিন্ন অনুষ্ঠান সুযোগ না পেয়ে অনেক শিল্পীকে হতাশা নিয়ে ফিরে যেতে দেখা যায়। গত ৭ই মার্চ ২০২৪ তারিখে জেলা শিল্পকলা একাডেমীতে অনুষ্ঠিত হয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীত সন্ধ্যা। ঐ অনুষ্ঠানে জেলা শিল্পকলা একাডেমীর পক্ষ থেকে দুই শ্রেণীর টিকিট বিক্রয় করা হয়েছিলো। সাধারণ এবং ভিআইপি। যার মূল্য ছিলো আকাশ ছোঁয়া। একটি সাধারণ টিকেটের মূল্য ধার্য করা হয়েছিলো ১’শ টাকা এবং ভিআইপি টিকেটের মূল্য ধার্য্য করা হয়েছিলো ৫’শ টাকা। যা একটা জেলা শহরের জন্য অতিরিক্ত এবং অতিরঞ্জিত। এছাড়াও এই বছরের ৩১ শে জানুয়ায়ী থেকে ২ ফেব্রুয়ারি তিন দিন ব্যাপি জেলা শিল্পকলা একাডেমীর আয়োজনে জাতীয় পিঠা উৎসব বাংলা ১৪৩০ অনুষ্ঠিত হয়। যদিও কোন নিয়ম নীতির পরোয়া না করে ঐ পিঠা উৎসবকে বর্ধিত করে ৩ ফেব্র“য়ারি করা হয়। ওই উৎসবে সেরা পিঠাশিল্পী ও স্টল নিয়ে স্বজনপ্রীতির অভিযোগ উঠেছিলো জেলা কালচারাল অফিসার মো. সুজন রহমানের বিরুদ্ধে। কিন্তু তার ক্ষমতার কাছে কোন অভিযোগ শেষ পর্যন্ত টিকে থাকতে পারেনি। নামে জাতীয় পিঠা উৎসব হলেও ঐ উৎসবে পিঠা স্টলের চেয়ে অন্যান্য স্টল-ই ছিলো বেশি।

জানা যায়, কুষ্টিয়া শিল্পকলার কালচারাল অফিসার সুজন রহমানের মা, স্ত্রী ও স্বজনরা সেরা পিঠাশিল্পী ও স্টলের পুরস্কার পায়। পিঠা উৎসব হলেও পুরস্কারের ক্যাটাগরিতে ছিল কিচেন হাউজ, কেক হাউস ও হস্তশিল্প। স্বজন প্রীতি করে কালচারাল অফিসার সুজন তার মা ও স্ত্রী স্বজনদের মাধ্যমে সম্মাননা পুরস্কার নিয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। তথ্যসূত্রে জানা যায়, দেশব্যাপী জাতীয়ভাবে এই পিঠা উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। কুষ্টিয়া জেলা শিল্পকলা একাডেমীর সাধারণ সম্পাদকের অনুপস্থিতিতেই আয়োজন করে। এই মেলার জন্য সরকারিভাবেই বাজেট করা হয় লক্ষ টাকা। কিন্তু এই মেলায় স্টল বাবদ নেওয়া হয়েছে ১৫০০ টাকা করে। ৩৯টি স্টল এর মধ্যে সব থেকে বড় এবং সামনে অবস্থান ছিল কালচারাল অফিসার সুজনের স্ত্রীর প্রথমা হস্তশিল্প’র স্টলটি। ৮ ফিট বাই ৮ ফিট প্রতিটা স্টোলের মাপ থাকলেও তার স্ত্রীর দোকান ছিল এর থেকে প্রায় তিনগুণ বড়। যা নিয়ে মেলার শুরু থেকে ফুঁসে ওঠে মেলায় অংশগ্রহণকারীরা। সম্মাননা স্মারক হিসেবে প্রতিটা স্টল মালিকদের সনদপত্র দেওয়া হয়েছে।

জানা গেছে, যার প্রতিটি প্রিন্টের মূল্য ৩০ টাকা করে। এদিকে সেরা স্টল ও পিঠা শিল্পীদের ৬ জনের প্রতিটি কেসের দাম ৩০০০ টাকা করে কেনা হয়েছে বলে জানিয়েছে স্বয়ং কালচারাল অফিসার সুজন। সেরা স্টলের সাজসজ্জার দিক থেকে প্রথমা হস্তশিল্প ঠিকঠাক থাকলেও বাকি ২ স্টল নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হয়। একজন কফি মেক করে এবং অন্যজন কেক বিক্রি করেই সেরা স্টলের পুরস্কার পাওয়ায় বিচারকদের বিচারিক ক্ষমতা নিয়ে অনেকেই মন্তব্য করেছেন। তবে বিচারকরা জানে না কোন স্টলকে সেরা পুরস্কার দেওয়া হয়েছে। যা বিচারকদের সাথে কথা বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। কিভাবে সেরা স্টল এবং সেরা পিঠা শিল্পী নির্বাচন করা হয়েছে তা নিয়েও বিচারকদের মধ্যে রয়েছে মতবিরোধ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলা শিল্পকলা একাডেমীর এক সহ-সভাপতি জানান, কালচার অফিসার সুজন নিজের মন মতন পুরস্কার দিয়েছে। কাকে দিলো, কিভাবে দিল সেটা আমরা জানি না। এ ঘটনায় মেলায় অংশ নেওয়া এক নারী উদ্যোক্তা জানান, সঠিকভাবে বিচার বিশ্লেষণ না করেই সেরা স্টল ও পিঠাশিল্পীদের পুরস্কার প্রদান করেছে সুজন। সামান্য এই মেলায় সুজন যে স্বজন প্রীতি করেছে লজ্জাজনক। এর থেকে বড় অনুষ্ঠান হলে সে কি করবে আল্লাহ-ই ভালো জানে। আমরা এরকম কালচার অফিসার চাই না।

খোঁজ আরো জানা যায়, সুজন জেলা শিল্পকলার কালচারাল অফিসার হওয়ার কারণে জেলা শিল্পকলা একাডেমীকে ব্যবহার করে প্রতি মাসে লাখ লাখ টাকা আয়ের পথ খুলে নিয়েছেন তিনি। হিন্দোল শিল্প গোষ্ঠী নামের একটি সাংস্কৃতিক সংগঠন পরিচালনা করেন জেলা কালচারাল অফিসার মো. সুজন রহমান এবং তার স্ত্রী রোখসানা পরভীন লাকি। সেই কারণেই জেলা ব্যাপী কোন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হলেই হিন্দোল শিল্প গোষ্ঠী’র পরিবেশনা থাকে নিয়মিত। জেলা শিল্পকলা একাডেমীতে বিভিন্ন কোর্সে প্রশিক্ষণ নিতে আসা ছাত্র-ছাত্রীরা পরবর্তিতে বেশী সুযোগ পাওয়ার জন্য জেলা শিল্পকলা একাডেমীর পাশাপাশি হিন্দোল শিল্প গোষ্ঠীতে ভর্তি হন। আবার অনেকেই জেলা শিল্পকলা একাডেমীর কোর্স বাদ দিয়ে শুধু হিন্দোল শিল্প গোষ্ঠীতে চলে যান। যার ফলে জেলা শিল্পকলা একাডেমীর কার্যক্রম এবং লক্ষ্য ব্যাহত হচ্ছে বলে মনে করেন অনেকে। আর সেই কারণেই জেলার শিল্প-সংস্কৃতি একপ্রকার হুমকির মুখে পড়েছে। আর এই সমস্ত অবহেলা থেকে পরিত্রান চান জেলার শিল্পীরা। জানতে চাইলে জেলা কালচারাল অফিসার সুজন রহমানের মুঠোফোনে ফোন দিলে তিনি ফোন রিসিভ না কারায় যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা শিল্পকলা একাডেমীর সাধারণ সম্পাদক আমিরুল ইসলাম বলেন, আমি রাস্তায় আছি মোটর সাইকেলের উপরে। এখন কিছু বলা যাবে না। সন্ধ্যার পরে রিং দিও।

এই বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমীর গবেষণা অফিসার (বাজেট ও প্লানিং) মোসাঃ সামসুন্নাহার আক্তার বলেন, এই বিষয়ে আপনার মনে হয় কোথাও ভুল হচ্ছে। আপনি এই বিষয়ে জেলা শিল্পকলা একাডেমীর সাধারণ সম্পাদক ও কালচারাল অফিসারের সাথে কথা বলেন। উনারা আপনাকে ভালো সলিউশন দিতে পারবে। তবে আমি শুনেছি সারা দেশে পিঠা মেলাতে অন্যান্য স্টল-ই বেশি ছিলো।

সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরোও পড়ুনঃ
© All rights reserved © 2021 | Powered By Sattokhobor Media Ltd
Site Customized By NewsTech.Com