*শিল্পকলার ফার্নিচার কালচারাল অফিসার সুজনের বাসায়
*কুষ্টিয়ার কন্ঠ প্রতিযোগিতায় অর্থ বাণিজ্য
*আউটডোর ভাড়ার টাকার কোন হিসেব নেই সুজনের কাছে
সত্যখবর ডেস্ক:: একটি জেলার সংস্কৃতি শিল্প’র বিকাশ ঘটাতে শিল্পকলা একাডেমির গুরুত্ব অপরিসীম। কিন্তু কুষ্টিয়া জেলার ক্ষেত্রে ঘটেছে ভিন্নতা। যেখানে শিল্পীদের আপন ঘর মনে করা হয় শিল্পকলাকে সেখানে কুষ্টিয়া জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে প্রবেশে জেলার অনেক শিল্পীদের বিমুখ লক্ষ্য করা গেছে। কিন্তু গত এক যুগ ধরে তারকা শিল্পী থেকে শুরু করে সাংস্কৃতিক অঙ্গনে কোন ভূমিকা রাখেনি এই শিল্পকলা একাডেমী। অর্থ আত্মসাৎ, অনিয়ম, দূর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে শিল্পকলা একাডেমী কুক্ষিগত হয়ে রয়েছে কালচারাল অফিসার সুজন রহমানের কাছে। সুজন রহমান, তার স্ত্রী ও হাতে গোনা কয়েকজন শিল্পী ছাড়া সরকারি-বেসরকারি কোন অনুষ্ঠানে শিল্পকলার পক্ষ থেকে জেলার অন্য শিল্পীকে দেখা যায় না। এবিষয় ছাড়াও সুজনের বিরুদ্ধে আরও বেশ কিছু অভিযোগ নিয়ে গত কয়েকদিন বেশ কিছু পত্রিকা সংবাদ প্রকাশ করে যাচ্ছে। কিন্তু টনক নড়েনি শিল্পকলা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের। যেন সুজনের কাছে বন্দী সবাই। এক অদৃশ্য খুটির বলে তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। তাই সচেতনমহল মনে করেন, সুজনের এসকল অপকর্মের সাথে শিল্পকলা সংশ্লিষ্ট অন্যান্য ব্যক্তিরাও জড়িত রয়েছে।
একটি বিশ্বস্থ সূত্রের দাবি, কুষ্টিয়া শিল্পকলা একাডেমির সাধারণ সম্পাদকের ছত্রছায়ায় থেকেই সুজন এসকল অপকর্ম কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছেন।
তথ্য অনুসন্ধানে জানা গেছে, শিল্পকলার নতুন ভবন তৈরী করার কৌশলে সুজন তার বাড়ি নির্মান শুরু করে। তার বাড়ি তৈরির অধিকাংশ সরঞ্জাম শিল্পকলা থেকে নিয়ে যায় সুজন। শিল্পকলার আসবাবপত্রও রয়েছে সুজনের বাড়িতে। যা অনুসন্ধান করলেই বেরিয়ে আসবে। বিভিন্ন বেসরকারি অনুষ্ঠানে অডিটরিয়াম ও আউটডোর ভাড়া দিয়ে সেই টাকা নিজের পকেটে ঢুকিয়েছেন তিনি। অফিসিয়ালিভাবে সেই টাকার কোন হিসেব বা হদিস পর্যন্ত নেই। গেল বছর শিল্পকলা একাডেমির আয়োজনে ‘কুষ্টিয়ার কন্ঠ’ সংগীত প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। ঐ প্রতিযোগিতার বিচারকের আসনে ছিলেন কালচালার অফিসার সুজন নিজেই। উপস্থাপিকা হিসেবে ছিলেন তার স্ত্রী। সেই সাথে প্রতিযোগিতায় স্টুডিও ব্যবহার করেছেন তার নিজের প্রতিষ্ঠিত এসআর স্টুডিও। বিচারকের আসনে থেকে তার স্টুডিওতে প্রতিযোগিদের কাছ থেকে অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন তিনি। যা নিয়ে ওই সময় ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়।
একাধিক সূত্রে জানা যায়, পূর্বে সদস্য ফি ছিলো ৫ হাজার টাকা। বর্তমানে তা বাড়িয়ে ১৫ হাজার টাকা নির্ধারন করেছেন তিনি। তারপরও কোন এক অদৃশ্য কারণে নতুন সদস্য নেওয়া বন্ধ রেখে নতুন করে আলোচনায় রয়েছেন তিনি। এদিকে কালচারাল অফিসার সুজন হলেও এই পদটির সুবিধা ও অপব্যবহার করে থাকেন তার স্ত্রী। সকল কার্যক্রম তার স্ত্রী দ্বারাই পরিচালিত হয়। যা শিল্পকলার বিভিন্ন অনুষ্ঠানে লক্ষ্য করা গেছে। গত এক যুগে শিল্পকলার যত পুরস্কার ও সম্মাননা রয়েছে এর মধ্যে বেশির ভাগ পুরস্কার-সম্মাননা-ই গেছে সুজনের স্ত্রী, মা-বোন ও স্বজনদের ঝুলিতে। শিল্পীদের সম্মাননা না দেওয়া থেকে শুরু করে সকল খাত থেকেই অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন এই টাকার কুমির সুজন। তার বর্তমানে বাড়ি, কয়েকটি দোকান, স্টুডিও, নিজস্ব সংগীত গ্রুপ ও স্ত্রীর নামে হস্তশিল্প’র শো রুমসহ লক্ষ লক্ষ টাকার অবৈধ সম্পদ রয়েছে।সম্প্রতি কুষ্টিয়া ডিসি কোর্ট প্রাঙ্গনে জেলা প্রসাকের পৃষ্টপোষকে অনুষ্ঠিত হচ্ছে বিসিক উদ্যোক্তা মেলা। ৯ দিনের এই মেলায় রয়েছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এই অনুষ্ঠানেও সুজন ও তার স্ত্রী দুজন মিলেই নিয়মিত সংগীত পরিবেশন করে যাচ্ছে। এ বিষয় নিয়েও রীতিমত নানা গুঞ্জনের সৃষ্টি হয়েছে।
নাম পরিচয় গোপন রেখে শিল্পকলার এক শিল্পী জানান, আমাদের কোন অনুষ্ঠানে তিনি গান গাইতে দেন না। তার স্ত্রীকে দিয়ে গান পরিবেশনা করে থাকেন। এছাড়াও আমাদের সম্মাননা আত্মসাৎ করেছেন বেশ কয়েকবার। যে কয়বার সম্মাননা দিয়েছেন সেখান থেকেও অর্ধেকের বেশি নিজের পকেটে ঢুকিয়েছেন। গত বছর কুষ্টিয়ার উদীয়মান কণ্ঠশিল্পী সাব্বির কোরাইশী অংশগ্রহণ করেন চ্যানেল আই সেরা কন্ঠে। সাব্বির এসএমএস রাউন্ড থেকে বাদ পড়ে যায়। আর এ বাদ পড়ার পেছনেও হাত রয়েছে সুজন রহমানের। কুষ্টিয়ার একজন শিল্পী হিসেবে সাব্বির শিল্পকলার পক্ষ থেকে কোন ধরনের সহযোগিতা পায়নি। এ নিয়ে সাব্বির কোরাইশীর সাথে যোগযোগ করা হলে তিনি ব্যাপক ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
এছাড়াও কুষ্টিয়ার এক পপুলার নারী কণ্ঠশিল্পী বেশ কয়েক বছর ধরে শিল্পকলার কোন অনুষ্ঠানে সুযোগ পান না। কারণ হিসেবে তিনি এ প্রতিবেদককে জানান, শিল্পকলার কালচারাল অফিসার সুজন রহমানের স্ত্রী চাই না, কুষ্টিয়াতে কোন শিল্পী তার বা তার স্বামীর উপরে উঠুক। এছাড়াও বেশ কিছু শিল্পীর সাথে এ প্রতিবেদক যোগাযোগ করলেও তারা সবাই-ই সুজন রহমান ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
এ বিষয়ে কুষ্টিয়া শিল্পকলার সুজন রহমানের সাথে কয়েকদফা যোগযোগের চেষ্টা করলেও তার কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
Leave a Reply