চট্টগ্রামের প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার ব্রিটিশ বিরোধী সশস্ত্র আন্দোলনে অংশ নেন। এই বাঙালি নারীর সাহস, আত্মত্যাগ আর দেশপ্রেম এখনো তাকে মানুষের মাঝে বাঁচিয়ে রেখেছে।
১৯১১ সালের ৫ মে চট্টগ্রামের ধলঘাটে তার জন্ম। বাবা জগদ্বন্ধু ওয়াদ্দেদার ছিলেন মিউনিসিপ্যাল অফিসের হেড কেরানী আর মা প্রতিভাদেবী ছিলেন গৃহিনী। প্রীতিলতাকে তার মা আদর করে ডাকতেন রাণী বলে।
ছাত্রী হিসেবে মেধাবীদের তালিকায় ছিলেন প্রীতিলতা। প্রতি ক্লাসে ভালো ফলাফলের জন্য শিক্ষকদের কাছে খুবই প্রিয় ছিলেন। ইংরেজ সৈন্যদের সঙ্গে পুরুষের বেশে ঝাঁসীর রাণীর লড়াইয়ের ইতিহাসের গল্প শুনে তার চেতনা উদ্দীপ্ত হয়।
তিনি স্বপ্ন দেখতেন লিঙ্গ বৈষম্যহীন সমাজ ও ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসন মুক্ত দেশের।
তারই লক্ষ্যে কাজ করে গেছেন তিনি। মাস্টার দা সূর্য সেনের নেতৃত্বে ১৯৩২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ইংরেজদের পাহাড়তলী ইউরোপিয়ান ক্লাব আক্রমণের সিদ্ধান্ত নেন। এই আক্রমণের দায়িত্ব ছিল আরেক বিপ্লবী নারী কল্পনা দত্তের হাতে। কিন্তু ঘটনার সাতদিন আগেই তিনি পুলিশের হাতে ধরা পড়ে যান। এরপর এই আক্রমণের ভার এসে পড়ে প্রীতিলতার ওপর।
তখন তার বয়স একুশ। কৈশোর থেকে কেবল তারুণ্যে পা দিয়েছেন। ওই মিশনে প্রীতিলতা ছদ্মবেশ নেন। রাত তারা তিন ভাগে ভাগ হয়ে ক্লাব আক্রমণ করেন।
আক্রমণ সফল হলেও প্রীতিলতা ক্লাব থেকে বের হয়ে আসতে ব্যর্থ হন। ক্লাবের কয়েকজন ইংরেজ অফিসারের হাতে রিভলবার ছিল। ফেরার পথে প্রীতিলতার বাম পায়ে গুলি লাগে। তিনি ধরা পড়ার আগেই আত্মাহুতি দেন।
অত্যাচারী ঔপনিবেশিক শোষকদের হাতে ধরা পড়লে যাতে তারা কোনো রকম তথ্য না পায় এবং এ ধরনের নির্লজ্জ শাসকদের হাতে নিজেকে আত্মসমর্পণ করার থেকে মৃত্যুকে বরণ করাকেই অধিক শ্রেয় মনে করেছেন।
বাঙালি এই নারী তার মাতৃভূমির জন্য যেভাবে জীবন বাজি রেখেছেন তা সবার জন্যই শিক্ষা। জন্মদিনে এই বিপ্লবী নারীকে বিনম্র শ্রদ্ধা।
Leave a Reply