দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়া কয়লা ভিত্তিক ৫২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্রর ৩টি ইউনিটের উৎপাদন পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে। গতকাল সোমবার সকাল সাড়ে ৯টায় যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে ১নং ইউনিটির উৎপাদন ৫৫ মেগাওয়াড বন্ধ হয়। বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির ৩টি ইউনিটের মধ্যে দ্বিতীয় ও তৃতীয় ইউনিট আগে থেকে বন্ধ থাকলেও সচল ছিল প্রথম ইউনিটটি। গত ৩১ শে জুলাই তৃতীয় ইউনিটটির উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায় এর পর আবার ০৭ আগষ্ট চালু করা হয় তার পর আবার বন্ধ হয়ে যায়। ৩টি ইউনিট থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন হওয়ার কথা ছিল ৫২৫ মেগাওয়াড এর মধ্যে ১নং ইউনিট থেকে ১২৫, ২য় ইউনিট থেকে ১২৫ ও ৩য় ইউনিট থেকে ৩৭৫। যা জাতীয় জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা কথা ছিল। কিন্তু ২০২২সালের অক্টোবর মাসে ২য় ইউনিটটি বন্ধ হয়ে যায়। এই ইউনিটটি মেরামত কাজে কোটি কোটি টাকা ব্যায় করা হয়। কাজের কাজ কিছুই হয় নি। ২০১৪ সালে ৩য় ইউনিটটি পুরোপুরি নতুনভাবে নির্মাণ করা হয়। ২০১৭ইং সালের শেষের দিকে ৩য় ইউনিটটি চালু করা হয়। কয়েক বছর যেতে না যেতেই ৩য় ইউনিটটিও যান্ত্রিক ত্রæটি দেখা দিলে সেটিও বারবার বন্ধ হয়ে পড়ে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়া কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রধান প্রকৌশলী মো. আবু বক্কর সিদ্দিক।
জানা যায়, বড়পুকুরিয়া খনি থেকে উৎপাদিত কয়লা দিয়ে ৫২৫ মেগাওয়াট বড়পুকুরিয়া কয়লা ভিত্তিক তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রর উৎপাদন কার্যক্রম চালিয়ে আসছিল চীনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হারবিন ইন্টারন্যাশনাল। পাঁচ বছরের চুক্তি মোতাবেক আগামী বছর তাদের মেয়াদ শেষ হবে। চুক্তি মোতাবেক এ সময় উৎপাদন সচল রাখতে ছোট ধরনের মেরামত ও যন্ত্রাংশ সরবরাহের কথা থাকলেও তার কিছুই করেননি চীনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। চীনা ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানটি সঠিকবাবে মালামাল সরবরাহ করার কথা থাকলেও এবং চুক্তি হলেও তারা মালামাল সরবরাহ করে নি। যার কারণেই বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি বার বার ত্রুটি দেখা দিলেও সঠিকভাবে মেরামত করা সম্ভব হয়নি। সে কারণেই বিদ্যুৎ উৎপাদন কাজ ব্যহত হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে।
বড়পুকুরিয়া তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের তিনটি ইউনিটের মধ্যে প্রতিটি ইউনিট সচল রাখতে প্রয়োজন হয় দুটি করে ইলেকট্রো হাইড্রোলিক অয়েল পাম্প। যা ওই ইউনিটের জ্বালানি হিসেবে তেল সরবরাহের মাধ্যমে উৎপাদন কার্যক্রম সচল রাখে। কিন্তু ২০২২ সাল থেকেই ৩টি ইউনিটের দুটির মধ্যে একটি পাম্প নষ্ট থাকায় যেকোনো সময় বন্ধের ঝুঁকি নিয়ে বিকল্প হিসেবে একটি ইলেকট্রো হাইড্রোলিক অয়েল পাম্প দিয়ে চলে আসছিল এর উৎপাদন কার্যক্রম। ফলে মাঝে মধ্যেই যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে বন্ধ হতো তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদন। একাধিকবার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে বিষয়টি অবগত করলে তারা অজ্ঞাত কারণে তা আমলে নেননি। সর্বশেষ গত ৬ সেপ্টেম্বর মেরামতের মাধ্যমে ৩য় ইউনিটটি চালু করা হলে দুদিনের মাথায় আবারও সোমবার সকালে যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দিলে বন্ধ হয়ে যায় সকল কার্যক্রম।
বড়পুকুরিয়া কয়লা-ভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রধান প্রকৌশলী মো. আবু বক্কর সিদ্দিক জানান, এর আগে ১ মাস ৬দিন বন্ধ থাকার পর গত শুক্রবার (৬ সেপ্টেম্বর) বিকেল ৫টা ১৭ মিনিট থেকে এ উৎপাদন শুরু হয়। যা দুদিন পরেই আবার বন্ধ হয়ে গেল। প্রতিটি ইউনিটের জন্য দুটি করে ইলেকট্রো হাইড্রোলিক অয়েল পাম্প থকে। যা ওই ইউনিটের জ্বালানি হিসেবে তেল সরবরাহের মাধ্যমে উৎপাদন কার্যক্রম সচল রাখে। কিন্তু ২০২২ সাল থেকেই তৃতীয় ইউনিটের দুটির মধ্যে একটি পাম্প নষ্ট হয়ে যায়। এরপর থেকে একটি পাম্প দিয়েই ঝুঁকি নিয়ে উৎপাদন কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছিল। কিন্তু ওই একটি পম্পও গত সোমবার নষ্ট হয়ে যাওয়ার পর দিনব্যাপী চেষ্টা করেও চালু করা সম্ভব হয়নি। ফলে পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে উৎপাদন। তিনি আরও জানান, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে জানানো হয়েছে তারা দু’সপ্তাহ সময় চেয়েছেন। চীন থেকে মেশিন এলেই উৎপাদন শুরু করা আ¯^াস দিয়েছেন। এদিকে বড়পুকুরিয়া তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে প্রকৌশলী কর্মকর্তা কর্মচারী সহ প্রায় ৬শতাধিক কর্মরত রয়েছেন। এখানে সরকারকে গুনতে হচ্ছে কোটি কোটি টাকা। এতে লাভবান হচ্ছে না সরকার।
শিবনগর ইউপির আবু বক্কর সিদ্দিক জানান, বড়পুকুরিয়া তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে উৎপান বন্ধ হয়ে যাওয়ায় কৃষি ও শিল্পখাতে উৎপাদন চরমভাবে ব্যহত হচ্ছে। এই এলাকর মিল কলকারখানাগুলি প্রায় বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। বড়পুকুরিয়া তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের আন্দোলন পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক আবু সাইদ জানান, ৩টি ইউনিট বন্ধ হয়ে যাওয়ায় উত্তর অঞ্চলের মানুষ চরম ভোগান্তিতে পড়েছে। শিল্প কালকারখানাগুলির উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেছে। এর দারভার সম্পূর্ন বড়পুকুরিয়া তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র কর্তৃপক্ষের। তারা কোন ভাবে এর দায়ভার এড়াতে পারে না। ষড়যন্ত্র চলছে বড়পুকুরিয়া কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি নিয়ে। এলাকাবাসী তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রকৌশলীদের বদলীর দাবী জানিয়েছেন।
Leave a Reply